সাপ্তাহিক জয়বাংলা ১৯৭১
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকা
সাপ্তাহিকীটির লক্ষ্য ছিল একদিকে মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি ও মুক্তিযোদ্ধাদের কৃতিত্ব জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্বজনমত সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভ।
পত্রিকাটি বাংলাদেশ প্রথম সরকারের প্রকাশনা, তথ্য, বেতার ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত হয়। এই বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুল মান্নান এমএন-এর উপর পত্রিকাটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও প্রকাশনার দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল। তিনি ছিলেন পত্রিকার সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি। সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য ছিলেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, ইবনে গোলাম সামাদ, মাহবুব উল্লাহ চৌধুরী, আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী, মোঃ সলিমুল্লাহ, আসাদ চৌধুরী, আবুল মঞ্জুর, মোহাম্মদ খালেদ, অনু ইসলাম। মোঃ জিল্লুর রহমান এমপি ছিলেন সম্পাদক মন্ডলীর উপদেষ্টা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষে পত্রিকাটি প্রকাশ করেন সম্পাদক মন্ডলীর সভাপতি আবদুল মান্নান ‘আহমদ রফিক’ ছদ্মনামে। ‘মতিন আহমদ চৌধুরী’ ছদ্মনামে পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন মাহবুব উল্লাহ চৌধুরী। কিন্তু পত্রিকার বিংশতম সংখ্যা (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৭১) থেকে ‘আহমদ রফিক’ ছদ্মনামের স্থলে প্রকাশক হিসেবে আবদুল মান্নানের নাম মুদ্রিত হয়। এই সংখ্যা থেকে পরবর্তী সকল সংখ্যায় ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের নাম (ছদ্মনাম মতিন আহমদ চৌধুরী) রহিত করা হয়। জয়বাংলা পত্রিকার সম্পাদকীয় ও প্রশাসনিক দপ্তরে যারা কর্মরত ছিলেন তাদের মধ্যে রয়েছেন আবদুর রাজ্জাক চৌধুরী (সহকারি সম্পাদক, বার্তা), আসাদ চৌধুরী (সহকারি সম্পাদক, ফিচার), রনজিত নিয়োগী (সহকারি সম্পাদক, বার্তা), সংবাদ লেখক ড. ইবনে গোলাম সামাদ, আবদুল মঞ্জুর, গোলাম সারোয়ার, রবীন্দ্র গোপ, অনু ইসলাম (নজরুল ইসলাম), আবদুল লতিফ সিদ্দিকী; ফিচার লেখক সাজিউল হক, প্রকাশনা বিভাগের সহকারি এমএ মোহাইমিন, ফটোগ্রাফার রবিউল আলম, মুখ্য হিসাবরক্ষক অজিত কুমার দত্ত, হিসাবরক্ষক পার্থ ঘোষ, প্রচার কার্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত সারোয়ার জাহান, এবং পিয়ন রাখাল চন্দ্র। জয়বাংলা ১৭ × ১০১/২ (ইঞ্চি) কলাম সাইজের দুই কলাম বিশিষ্ট পত্রিকা। প্রথম সংখ্যা থেকে পত্রিকা ৮ পৃষ্ঠায় ছাপা হতো, কিন্তু দ্বাদশ সংখ্যা থেকে পৃষ্ঠা সংখ্যা বাড়িয়ে ১২ করা হয়। শুরুতে পত্রিকার প্রতি সংখ্যার অভিহিত মূল্য ছিল ২০ পয়সা এবং তৃতীয় সংখ্যা থেকে মূল্য নির্ধারিত হয় ২৫ পয়সা। জয়বাংলা পত্রিকার মূল শিরোনামের ডিজাইন করেন কামরুল হাসান।
কলকাতার পার্ক সার্কাসের ২১/১ বালু হাক্কাক লেনে ছিল জয়বাংলা পত্রিকার অফিস দপ্তর। পত্রিকাটি মুদ্রিত হয় শিয়ালদহ রেলস্টেশনের অদূরে অবস্থিত মুজিবনগর জয়বাংলা প্রেসে। পশ্চিমবঙ্গের কয়েকজন বাঙালি শিল্পপতি পত্রিকাটির প্রকাশনায় আর্থিক সহায়তা করেন। পত্রিকার জন্য নিউজপ্রিন্ট কাগজের যোগান দিতো কলকাতার আনন্দবাজার গ্রুপ।
সাপ্তাহিক জয়বাংলা প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৭১ সালের ১১ মে (২৭ বৈশাখ ১৩৭৮)। পত্রিকাটি ১৯৭১ সালের ২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিয়মিত প্রকাশিত হয়। মোট সংখ্যা ৩৫ টি।
জয়বাংলা পত্রিকার প্রথম সংখ্যায় মুদ্রিত হয় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা। মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি এবং শরণার্থীদের সার্বিক অবস্থার পর্যালোচনা ছাড়াও এ পত্রিকায় কয়েকটি নিয়মিত বিভাগ ছিল, যেমন রণাঙ্গনে, বিশ্বজনমত, বুমেরাং, শিল্প সংস্কৃতি। এছাড়া ছিল ধারাবাহিক রচনা ‘একটি যুদ্ধ: বহু ইতিহাস’, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ‘লাখো শহীদের লাশের তলায় পাকিস্তানকে কবর দিয়েছে কারা, আমরা না তোমরা’, ‘হুশিয়ার! ইয়াহিয়া-টিক্কা হুশিয়ার’, আওয়ামী লীগের মেনিফেস্টোর কয়েকটি দিক ইত্যাদি।
ডিজিটাইজ কপিটি সংগ্রহ করা হয়েছে আমেরিকা প্রবাসী মুক্তিযুদ্ধ গবেষক জনাব মাহবুবুর রহমান জালালের বদন্যতায়