অন্যজীবন
জাহানারা ইমাম
চারুলিপি
সামাজিক ইতিহাস রচনার অন্যতম উপাদান আত্মজীবনী, এ ধরনের রচনার মাধ্যমে আমরা জানতে পারি কিছু সামাজিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে। জানতে পারি রচয়িতার সামাজিক অবস্থান এবং ঐ অবস্থান নির্ধারণ করতে পারলে একটি বিশেষ সমাজে, একটি শ্রেণীর সামাজিক চালচলন, মূল্যবোধ স্পষ্ট হয়ে ফুটে উঠবে আমাদের সামনে।
বাংলা ভাষায় আত্মজীবনীর সংখ্যা খুব বেশি নয়। রচয়িতাদের মধ্যে খ্যাত ও স্বল্পপরিচিত ব্যক্তি রয়েছেন। আবার এমন অনেকে আছেন যাঁরা এখনও টিকে আছেন শুধুমাত্র আত্মজীবনীর মাধ্যমে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সামগ্রিকভাবে বাংলা সাহিত্যের এ-শাখাটি যথেষ্ট দুর্বল।
‘অন্যজীবন’, বাংলা ভাষার এই শাখায় একটি উল্লেখযোগ্য সংযোজন। আত্মজীবনীতে ‘আমি’ থাকবেই কিন্তু সে ‘আমি’ কখনও প্রবল হয়ে ওঠে নি এবং এ কারণেই তা উল্লেখযোগ্য। বিগত শতকের ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের রক্ষণশীল বাঙালি মুসলমান পরিবারের একটি মেয়ের শৈশব ও প্রথম যৌবনের চোখ দিয়ে দেখা সেই সময়ের এক অনন্যসাধারণ চিত্র—‘অন্যজীবন’।
জাহানারা ইমাম শুধু একজন লেখিকা বা শিক্ষাবিদ নন, যদিও দীর্ঘ সময় তিনি স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যলয়ে শিক্ষকতার কাজে ব্যয় করেছেন এবং বহু দেশও ঘুরেছেন। তাঁর বড় পরিচয় বিধৃত রয়েছে সমাজের প্রতি অঙ্গীকারের ভেতর, বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে আপসহীন কর্মকাণ্ড, বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মিছিলে একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে তাঁর অনিবার্য উপস্থিতি—ব্যক্তি হিসেবে তাঁকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দিয়েছে।