বই-দলিলপত্র-প্রবন্ধসকল কনটেন্ট
Trending

আন্ধা হাফিজের সাক্ষাৎকার – অম্লান দেওয়ান

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

আন্ধা হাফিজের সাক্ষাৎকার – অম্লান দেওয়ান

(ছবিতে ক্লিক করুন মূল পত্রিকার পাতায় পড়ার জন্য)

দীর্ঘ তিন দশকের পেশাগত জীবনে বিভিন্ন সংবাদপত্র, ঢাকার ফরাসী দূতাবাসসহ বেশ কিছু বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে। কিন্তু এখনো আমার স্মৃতিকে নাড়া দেয় বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের রিপোটিং এর দিনগুলো। তারুন্যের প্রতীক মিনার মাহমুদের সাপ্তাহিক বিচিন্তা দিয়েই আমার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি।

পেছনে ফেলে আসা সেই সব দিনে কি এক অজানা নেশায় ছুটে বেড়াতাম অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরির কাজে। ৩২ পৃষ্ঠার নিউজপ্রিন্টে ছাপা সেই সাপ্তাহিকের সার্কুলেশন ছিল কয়েক লাখ।

সাপ্তাহিক বিচিন্তায় আমার করা অনেক রিপোর্ট ছাপা হলেও বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়ক খ্যাত চট্রগ্রামেরর পীর আন্ধা হাফিজের সাাক্ষাতকার নেওয়ার ঘটনাটি আমার রিপোর্টিং জীবনের সবচাইতে স্মরনীয় ঘটনা।

১৯৯১ সালের কোন একদিন এ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাসের এ লিগ্যাসি অব ব্ল্যাড পড়তে গিয়ে থমকে গেলাম।

“শেখ মুজিবের হত্যাকান্ড: তার সময় ফুরিয়ে এসেছে, কাজটা অত্যন্ত গোপনে করতে হবে: আন্ধা হাফিজ” শিরোনামের অধ্যায়টা মন দিয়ে খুটিয়ে খুটিয়ে পড়লাম। গল্পের মতো করে লেখা অধ্যায়টিতে ম্যাসকারেনহাস লিখেছেন বঙ্গবন্ধুর খুনি ফারুক রশিদ এবং তার স্ত্রীরা কখন কিভাবে আন্ধা হাফিজের সঙ্গে দেখা করেন। আন্ধা হাফিজ কি বলেছিলেন সেদিন।

ম্যাসকারেনহাস লিখছেন:

“১৯৭৫ সালের ১৪ ই আগষ্ট। বেলা এগারোটা ছাড়িয়েছে কেবল। সময় যেন অতি দ্রুত নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। চট্রগ্রামের এক বাজারের মাঝামাঝি এসে তার ট্্যাকসি বিকল হয়ে পড়েলো। বিকল গাড়িতে বসে মেজর ফারুকের স্ত্রী ফরিদা অস্থির হয়ে পড়লেন। দু;শ্চিন্তায় ঘেমে একেবারে গোসল করার উপক্রম। এক ঘন্টারও বেশি সময় ধরে তিনি হালিশহরে অবস্থানরত আন্ধা হাফিজের কাছে একটা জরুরি খবর পৌছানোর চেষ্টা করছিলেন। ফরিদা ঢাকা থেকে এর আগের দিন বিকেলে চট্রগ্রাম এসেছেন। সঙ্গে তার মাও ফিরেছেন। ফারুক তাকে অন্ধ দরবেশের সঙ্গে আলোচনা করতে পাঠিয়েছেন। ফারুকের স্পষ্ট নির্দেশ : আন্ধা হাফিজকে বলবে, আমি ১৫ তারিখেই কাজটা করতে যাচ্ছি। আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দেশের জন্যই আমি এ কাজটি করতে যাচ্ছি। আমি যা করছি তা জনগণের মঙ্গলের জন্যই করছি। আমি চাই তিনি আমাকে বলুক আমি ঠিক পথে আছি নাকি ভুল করছি। তিনি যদি অন্য কিছু করতে বলেন-আমি তাই করবো। ফারুক ফরিদাকে দুপুরের মধ্যেই আন্ধা হাফিজের মন্তব্য টেলিফোনে জানিয়ে দিতে বলেছিলেন। ..ফরিদা গিয়ে দেখলো দরবেশ আন্ধা হাফিজ লুঙ্গি ও সুতির গেনজি গায়ে পায়ের উপর পা তুলে একটি নীচু চৌকিতে বসে আছেন। একটা কাপড় তার কামড়ায় ঝুলছিল। ফরিদা একটা বেতের মোড়ায় গিয়ে বসলো। অন্ধ দরবেশ ফরিদার হাত নিজের হাতের মধ্যে নিয়ে নীরবে ফারুকের পাঠানো সংবাদ শুনে নিলেন। তারপর একটা দীর্ঘনি:শ্বাস ফেলে আবেগজড়িত কন্ঠে উর্দু ভাষায় বললেন, তার সময় ফুরিয়ে এসেছে। তোমাদের যা করার করে ফেলো। তবে অত্যন্ত গোপনে কাজটা করতে হবে। আবারো এক লম্বা নীরবতা। তারপর তিনি ফরিদাকে বললেন, “ ফারুককে বলো কাজটা শুরু করার আগে সে যেন আল্লাহর রহমতের জন্য দোয়া করে নেয়। তার সাথীরাও যেন একইভাবে দোয়া করে নেয়। দুটি সুরা দিলাম। সে যেন অনবরত তা পাঠ করতে থাকে। তাহলে তার মন পবিত্র থাকবে। পবিত্র চিন্তা ছাড়া সে আর অন্য চিন্তা করতে পারবে না। ফরিদা বিদায় নেওয়ার জন্য উঠে দাড়ালো। যাবার পূর্ব মূহুর্তে সে তার স্বামী ও সাথীদের জন্য দোয়া করতে আন্ধা হাফিজকে অনুরোধ জানালো। আন্ধা হাফিজ তাকে সান্তনা দিয়ে বললেন, “ চিন্তা করো না। আমি তাদের আল্লাহর হাতে সপে দিয়েছি। এটা তার ইচ্ছা। তিনিই তাদের রক্ষা করবেন…………”

বির্তকিত বৃটিশ সাংবাদিক ম্যাসকারেনহাসের বর্ণনার অনেক কিছু আমার কাছে কাল্পনিক, বানোয়াট আর অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল। সঠিক ইতিহাস জানার দায় থেকে আর তা যাচাই করতেই আন্ধা হাফিজের সাাক্ষাতকার নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। কিন্তু কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। প্রস্তুতি পর্বের গবেষনায় জানা গেলো দেশের অনেক স্বনামধন্য জাদরেল সাংবাদিকরা আন্ধা হাফিজের সাাক্ষাতকার নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সফল হননি।

ম্যাসকারেনহাসের বইয়ে তার বিষয়টি সামনে চলে আসায় তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে চলতেন। বেশকিছুদিন চেষ্টার পর সফল হলাম। ছাপা হল আন্ধা হাফিজের প্রথম সাাক্ষাতকার। সর্বশেষ সাক্ষাতকারও বটে। কারন এর পরও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ এ চরিত্র কাউকে সাাক্ষাতকার দেননি। ১৯৯১ সালের অক্টোবর মাসে সাপ্তাহিক বিচিন্তায় প্রকাশিত এ সাক্ষাতকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

সাাক্ষাতকারের পূর্বে: চট্রগ্রামের আন্ধা হাফিজ। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক ঘটনার সঙ্গে এসেছে তার নাম। তবে আন্ধা হাফিজ সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকান্ডের নেপথ্য নায়ক হিসাবে। তিনি নিজেই স্বীকার করেছেন বাংলাদেশের অধিকাংশ জেনারেল তথা শীর্ষ সেনাকর্মকর্তারা তার সঙ্গে দেখা করতে চট্রগ্রাম আসেন। বিরোধীদল আর সরকারদলের শীর্ষনেতারাও রয়েছেন তার মুরিদের তালিকায়। তারা দোয়া কামনা করেন। তিনি দোয়া করেন। নির্দেশ দেন করনীয় সর্ম্পকে।

সময় বিকাল পাচটা। স্থান: চট্রগ্রামের হালিশহর। একতলা পাকা বাড়িতে থাকেন তিনি। দর্শনার্থীরা আসছেন। যাচ্ছেন। আমাদের বলা হলো বাইরে অপোক্ষা করতে। মিনিট তিরিশেক অপোক্ষার পর আমরা মুখোমুখি হলাম সত্তরোর্ধ আন্ধা হাফিজের। তার বসার ঘরটিতে রয়েছে ধবধবে সাদা চাদর বিছানো একটি খাট, দুটি বেতের চেয়ার, একটি পুরনো টেবিল, বিক্ষিপ্ত কিছু কাগজপত্র। দেয়ালে আরবী হরফে লেখা কোরানের বিভিন্ন বানী বাধাই করে ঝোলানো। উচু একটি চেয়ারে ঘাড় কাত করা অবস্থায় বসে আছেন তিনি। মনে হলো অসুস্থ। আমরা বসার পর একটু নড়েচড়ে উঠলেন। কাপড় পাল্টালেন। বাথরুমে গেলেন। আবার ফিরে এলেন। বসলেন নিজের চেয়ারে। এরই মধ্যে এলাকার কয়েকজন তরুন অত্যন্ত উত্তেজিতভাবে প্রবেশ করলেন। থানা পুলিশ সংক্রান্ত কি এক ঝামেলার ব্যাপারে পরামর্শ নিলেন আন্ধা হাফিজের। আন্ধা হাফিজ ফোনে কথা বললেন থানায়। সমাধান হয়ে গেলো। খুশিমনে বেরিয়ে গেলেন যুবকরা।

আন্ধা হাফিজ চোখে দেখেননা। বাংলা বলতে পারেন না। তবে বাংলা বোঝেন। আমাদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বলেছেন, তা হুবহু বাংলা করেছেন তার এক মুরিদ। যিনি সোনালী ব্যাংক লালদিঘীর পাড় শাখার একজন কর্মকর্তা। আন্ধা হাফিজের সাথে আমাদের কথোপকথন শাব্দিক সম্পাদনা করে তুলে ধরা হলো:

বিচিন্তা: আপনি কি সবসময় এ বাড়িতে থাকেন?

আ: হা: ১৯৫৫ সাল থেকেই আমি এখানে আছি। আমার জন্ম লাখ্নোতে এবং ঐখানেই আমার আসল বাড়ি। ঐখানে এখনো আমার অনেক আত্নীয়-স্বজন আছে।

বিচিন্তা: এখানে আর কে কে আছেন?

আ:হা: এখানে আমার বড় ভাই ছিলেন যিনি চট্রগ্রাম রেলওয়েতে চাকরি করতেন। আমার ভাইয়ের দুই ছেলে। একজন ঢাকায় ব্যবসা করেন আর একজন এখানে থাকেন। আমার আমার অসংখ্য মুরীদ আছে যারা আমাকে ভালোবাসে আর আমার দেখাশুনা করে।

বিচিন্তা: বাংলাদেশেতো অনেক পীর ফকির আছেন। আমরা কিভাবে বুঝবো কে আসল আর কে ভন্ড?

আ:হা: পীর ফকির হতে হলে লম্বা চূল থাকতে হবে, দাড়ি থাকতে হবে এমন কোন কথা নেই। বুজর্গ চিনতে তার কাছে যেতে হবে। তার সাথে আলাপ করতে হবে। তারপর বোঝা যাবে সে আসল না ভন্ড। আমাদের নবীজী বলেছেন, শরীয়ত আর তরীকত। শরীয়ত হলো নামাজ রোজা, আর তরীকত হলো একটা লোকের ব্যবহার।

বিচিন্তা: ইসলামে আছে, একজন অন্যায়কারী বাদশাহর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করাটা একটা জেহাদ। আমরা দেখেছি, যারাই পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে রাষ্ট্রাক্ষমতায় এসেছে তারাই বিভিন্ন পীরের দোয়া নিয়ে দেশ চালায়। যাকে জনগন সমর্থন দেয় না, তাকে কি একজন পীরের সমর্থন দেয়া উচিত?

আ:হা: যারা স্বৈরাচার আর স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে চলেন আর যে পীরের ছত্রছায়ায় এসব করেন সে পীরের উচিত তাদের বাতিল করে দেওয়া। জায়গা না দেওয়া। যদি সত্যিকারের পীর হয় তাহলে গনধিকৃত ব্যক্তিকে সে আউট করে দেবে। কখনোই প্রশ্রয় দেবে না।

বিচিন্তা: অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাসের এ লিগ্যাসী অব ব্ল্যাড গ্রন্থটিতে আমরা পড়েছি যে. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনী ফারুক, রশীদ আপনার কাছে এসেছিল মুজিবকে হত্যা করার আগে। আপনি তাদের দোয়া করেছেন এবং আপনার দোয়া পেয়েই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। এ ব্যাপারটা বলবেন?

আ:হা: অ্যান্থনী ম্যাসকারেনহাস আসলে আমার কাছে কোনদিন আসেননি। কোন রাজনৈতিক দলের লোকের কাছ থেকে সে হয়তো ইনফরমেশন নিয়েছে।

আসলে, কর্নেল ফারুক-রশীদ ভায়রা ভাই। দু্ই বোনকে তারা বিয়ে করেছে। তাদের স্ত্রীরা শিল্পপতি এ, কে খানের ভাগ্নি। এরা বহু আগে থেকেই আমার কাছে আসতো। এরা সবসময় আমাকে বলতো, হুজুর আমাদের জন্য দোয়া করবেন। আমরা যেন একসাথে মিলেমিশে থাকতে পারি। তাড়াতাড়ি যেন আমাদের বিয়ে হয়। আমিও তাদের দোয়া করি। আর দোয়ার কারনেই তাদের দুজনের বিয়ে হয় কর্নেল ফারুক-রশীদের সাথে। এরাও বিয়ের আগে থেকেই আমার কাছে আসতো। আমিতো কাউকে মানা করতে পারি না। চোর হোক, গুন্ডা হোক..সবাই আমার কাছে আসবে। সবাইকে আমি দোয়া করি।

বিচিন্তা: কিন্তু বঙ্গবন্ধু মুজিবকে হত্যায় কর্নেল ফারুককে উৎসাহ যোগানোর ব্যাপাটা……

আ:হা: এটা বানোয়াট একটা কাহিনীমাত্র। আমি শুনতে পাই আমার নাম উল্লেখ করে বইটায় লেখা হয়েছে। আমার ছবি ছাপা হয়েছে। কে আমার ছবি তুলে নিয়েছে আমি টের পাইনি। কিন্তু আমার কাছে কোন সাংবাদিক এসে প্রশ্ন করা, স্টেটম্যান নেওয়া.. এসব কেউ কোনদিন নেয়নি। কিন্তু কিছুদিন পর শুনলাম আমি নাকি কর্নেল ফারুককে দোয়া করেছি এবং আমার দোয়া পেয়েই ফারুক শেখ মুজিবকে হত্যা করেছে।

প্রকৃত সাধক যারা, তারা মানুষকে ভালোবাসে। তারা কখনো কোন মানুষকে হত্যার জন্য দোয়া দিতে পারে না। .. ছোটবেলা থেকেই আমি মানুষের উপকার করে আসছি, কিন্তু কেউ বলতে পারবে না.. আমি কারো ক্ষতি করেছি।

ম্যাসকারেনহাসের বইতে যখন আমার নামটা আসছে, তখন বিদেশ থেকে ভক্তরা আমাকে ঘটনাটা জানায়। আমি এতে প্রচন্ড দু:খ পাই।

গ্ল্যাকসো বাংলাদেশের তখনকার চেয়ারম্যান ছিলেন ব্যারিষ্টার রশীদুজ্জামান, আমার মুরিদ..উনি কি এক কাজে তখন লন্ডন ছিলেন। উনি খবর পেয়ে লন্ডন তেকে আমাকে ফোন করেন এবং বলেন: “ হুজুর আপনার বিরুদ্ধে এসব লেখা হয়েছে।”

আমি বললাম, আমার কাছেতো কেউ আসেনি। এটা সম্পূর্ন বানোয়াট এবং মিথ্যা।

রশীদুজ্জামান ম্যাসকারেনহাসের সাথে দেখা করেন এবং ম্যসকারেনহাসকে বললেন, “ আপনি হুজুরের সর্ম্পকে যেসব কথা লিখেছেন সেগুলো কি আপনি কনফার্ম হয়ে বলেছেন? হুজুরের সাাক্ষাতকার নিয়ে বলেছেন?

ম্যাসকারেনহাস এতে অনুতপ্ত হলেন। তিনি রশীদুজ্জামানকে বললেন, আমি বাংলাদেশে এসে হুজুরের কাছে মাফ চেয়ে যাব।

ব্যারিষ্টার রশীদ ফোনে আমাকে সব কথা জানায়।

আমি রশীদকে বললাম, সে হয়তো আমার কাছে মাফ চাওয়ার সুযোগ পাবে না। আসলেও সে সুযোগ পায়নি। এর কিছুদিন পরিই ম্যাসকারেনহাস হার্ট অ্যাটাকে মারা যান।

বিচিন্তা: বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর ফারুক-রশীদ কি আপনার কাছে এসেছিলেন?

আ: হা: না, এরপর উনারা আর আমার কাছে আসেননি।

বিচিন্তা: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমান এবং জেনারেল এরশাদের মূল্যায়ন করবেন?

আ: হা: শেখ মুজিবের অবদানের কারনেই বাঙালি বলে যে একটা জাতি আছে এ সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগে এ সম্পর্কে পৃথিবীর কেউ জানতো না। এটা ইতিহাসে লিখিত থাকবে এবং কেউ এটা অস্বীকার করতে পারবে না।

জিয়াউর রহমান যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন, প্রতিটি কাজ উনি ঈমানদারির সাথে করেছেন। জেনেশুনে অন্যায় করা অথবা নিজের উন্নতি করা.. এ ধরনের কাজ তিনি করেননি। মানুষের খেদমত করার জন্য.. দেশের উন্নতির জন্য তিনি প্রতিটি কাজ করেছেন।

এরশাদ সাহেবও দেশের উন্নতির জন্য যথেষ্ঠ করেছেন। কিন্তু উনার যারা এডভাইজার ছিলেন, তারা সবসময় তাকে মিসইনফরমেশন দিয়েছেন। ভূল তথ্য দিয়েছেন। আর এ কারনেই তার পতন হয়েছে।

সর্বশেষ প্রশ্ন ছিলো: শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়ার মধ্যে কাকে তার সবচাইতে যোগ্য মনে হয়।

এ প্রশ্নের উত্তর দিলে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হতে পারে এ অজুহাতে তিনি এটি এড়িয়ে যান।

সাপ্তাহিক বিচিন্তায় এটি প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি খুব রাগ করেছিলেন। চট্রগ্রামের পত্রিকা স্টল থেকে সবগুলো কপি কিনে নিয়েছিলেন যাতে আর কেউ পড়তে না পারে। যদিও নতুন উদ্যোমে আবারও ছাপা হয়েছিল সেই সংখ্যাটি। পাঠানো হয়েছিল চট্রগ্রামে। পৌছে গিয়েছিল লাখ লাখ মানুষের হাতে…এরপর আন্ধা হাফিজ খুব রাগ করেছিলেন। ফোন করেছিলেন বিচিন্তার কাকরাইলের অফিসে। সে ফোন রিসিভ করেছিলেন সম্পাদক মিনার মাহমুদ স্বয়ং। সেনাবাহিনীর জেনারেলরা তার মুরিদ এ তথ্য দিয়ে আন্ধা হাফিজ ধমকের সুরে ওপাশ থেকে বলেছিলেন: “ তোর মতো সাংবাদিক আমি এক নিমেষেই গায়েব করে ফেলতে পারি। তোরা আমার সাথে বেঈমানি করেছিস।” বেনসনের ধোয়ার কুন্ডলি পাকাতে পাকাতে ওকে গুডবা্ই বলে মিনার মাহমুদ রিসিভার রেখে দিয়েছিলেন।

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button