অডিও-ভিডিওবই-দলিলপত্র-প্রবন্ধ
Trending

কবরীর মুক্তিযুদ্ধ

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

বিশ্ববাসীর কাছে মুক্তিযুদ্ধের চিত্র তুলে ধরেছিলেন কবরী
নভেম্বর ২৩, ২০১১
ডয়েচে ভ্যালে
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান অভিনেত্রী ও চলচ্চিত্র পরিচালক কবরী সারোয়ার ১৯৭১ সালে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েন পাক সেনাদের বিরুদ্ধে৷ বর্তমানে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন৷

চট্টগ্রামে জন্ম জনপ্রিয় অভিনেত্রী কবরী সারোয়ারের৷ তাঁর আসল নাম মিনা পাল৷ পিতা শ্রীকৃষ্ণ দাস পাল এবং মা শ্রীমতি লাবণ্য প্রভা পাল৷ ১৯৬৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে আবির্ভাব কবরীর৷ এরপর থেকে ধীরে ধীরে টেলিভিশন এবং সিনেমা জগতে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ১৯ এপ্রিল পরিবারের অন্য সদস্যদের সাথে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি চলে যান তিনি৷ সেখান থেকে ভারত পাড়ি দেন৷

সেসময় রাজনৈতিক অঙ্গনের সাথে কোন সম্পর্ক না থাকলেও একজন শিল্পী হিসাবে কীভাবে মুক্তিযুদ্ধের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সেসম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘তখন তো আমি আওয়ামী লীগের কিংবা কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য ছিলাম না৷ একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, সাধারণ মানুষ, একজন অভিনেত্রী এবং শিল্পী হিসেবে মানবতা লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে আমি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম৷ বাবা, মা, ভাই-বোন, সম্পদ, লোভ-লালসা সবকিছুর মায়া ত্যাগ করে আমি ভাষণ দিয়েছিলাম এবং জনসম্মুখে কাঁদছিলাম এজন্য যে পাকিস্তানি বাহিনী যেভাবে হত্যা-নির্যাতন চালাচ্ছিল আমাদের দেশের মানুষের উপর তার হাত থেকে যেন আমার দেশের মানুষ অতি দ্রুত রক্ষা পায়৷ সেজন্য আমি মানুষের কাছে, বিশ্ববাসীর কাছে যে আহ্বান জানিয়েছিলাম তার পরিণতি যে কী হতে পারে তা একবারও আমার মনে আসেনি এবং ভাবার কোন অবকাশও ছিল না৷”

১৯৭১ সালে অভিনেত্রী কবরী সারোয়ার

কলকাতা গিয়ে তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে বিভিন্ন সভা-সমিতি ও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেন৷ এসময়ের একটি স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে কবরী বলেন, ‘‘সেখানে একটি অনুষ্ঠান হয়৷ আমি বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলছিলাম৷ সেখানে আমি তুলে ধরি, কীভাবে আমি আমার মা-বাবা, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন সবাইকে ছেড়ে এক কাপড়ে একেবারে কপর্দকহীন অবস্থায় সেখানে পালিয়ে যায়৷ সেটা বলতে বলতে আমি বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্যের আবেদন করি যেন আমার দেশের মানুষকে বাঁচানোর জন্য, আমার মা-বোনকে বাঁচানোর জন্য৷ তারপর আমি কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞানহারা হয়ে পড়ি৷ আর কিছুই জানিনা৷”

বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ভারত যে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সেটা কৃতজ্ঞতাভরে স্মরণ করেন কবরী সারোয়ার৷ তিনি জানান, ভারতের বিভিন্ন জায়গায় সেসময়ের জনপ্রিয় বড় মাপের সংগীত পরিচালক, সংগীত শিল্পী ও অভিনয় শিল্পীদের সাথে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সভা-সমাবেশ ও অনুষ্ঠান করেছেন তিনি৷ এভাবে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অর্থ ও পোশাক সংগ্রহ করতেন তাঁরা৷ বিশ্ববাসীর কাছে সহায়তার আহ্বান সম্বলিত কবরীর বিখ্যাত ভাষণ ভারতের ‘আকাশবাণী’ থেকে মাঝে মাঝেই বাজানো হতো৷ তাঁর এই ভাষণ তাঁর মা-বাবাসহ বাংলাদেশের অনেক মুক্তিকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধারাও শুনেছিলেন বলে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জানতে পারেন কবরী৷

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে কবরী সারোয়ার

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবারও চলচ্চিত্র জগতে মনোনিবেশ করেন কবরী সারোয়ার৷ সুভাষ দত্তের পরিচালনায় ‘সুতরাং’ ছবির নায়িকা হিসেবে অভিনয় জীবনের শুরু কবরীর৷ এরপর থেকে প্রায় একশ’টি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি৷ এগুলোর মধ্যে হীরামন, ময়নামতি, চোরাবালি, পরুলের সংসার, বিনিময়, আগন্তুক’সহ জহির রায়হানের তৈরি উর্দু ছবি ‘বাহানা’ এবং ভারতের চলচ্চিত্র নির্মাতা ঋত্বিক ঘটকের ছবি ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ উল্লেখযোগ্য৷ ২০০৮ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি৷ যুক্ত রয়েছেন অসংখ্য নারী অধিকার ও সমাজসেবামূলক সংগঠনের সাথে৷

তাঁর অতীত ও বর্তমান সংগ্রামের তুলনা করতে গিয়ে কবরী বলেন, ‘‘দেশের জন্য লড়াই করতে পেরেছিলাম বলে আমি গর্ববোধ করি৷ এছাড়া আমার দুই ছোট্ট শিশুও সেসময় আমার সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী৷ এটাই আমার সবচেয়ে গর্ব ও সার্থকতার বিষয়৷ এখন আমার উপলব্ধি হয় যে, মানুষকে তো মরতেই হবে৷ তাই এমন কিছু করেই মরা ভালো৷ তাই আমার এখন মরতেও দ্বিধা নেই৷ যাহোক, আজও আমি বাংলাদেশের সাংসদ হয়ে লড়াই করে যাচ্ছি সুবিধা বঞ্চিত মানুষের অধিকারের জন্য৷ নারায়ণগঞ্জের উন্নয়নের জন্য লড়াই করে যাচ্ছি৷ তবে আমি যেহেতু একজন মুক্তিযোদ্ধা৷ যেই সাহসের সাথে লড়াকু সৈনিক হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছিলাম যুদ্ধক্ষেত্রে তার তুলনায় আমার বর্তমান লড়াই তো তেমন কিছুই না৷ তাই এই লড়াইয়েও জয়ী হবো সেই প্রত্যাশা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি৷”

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

One Comment

  1. তিনি কি কারণে মালাউনত্ব ত্যাগ করলেন, সে ব্যাপারে কিছু বললেন না যে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button