জাগ্রত বাংলাদেশ
আহমদ ছফা
১৯৭১
এই গ্রন্থখানি লেখার কাজ আমাকে অল্প সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হয়। বাংলাদেশের সংগ্রামের আসল চিত্রলেখা ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ থেকে নিরপেক্ষ বিচার এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তােলার জন্য যােগ্য ব্যক্তির প্রয়ােজন ছিলাে। যে-সকল বিষয়ে অধিকার থাকলে গােটা বাংলাদেশের মানুষের সাধনা-সংগ্রাম লােক-লােচনের সামনে মেলে ধরা যেতাে তেমন পারঙ্গমতা আমার নেই, একথা বিনয়ের সঙ্গে অকুণ্ঠিত চিত্তে স্বীকার করি। বাংলাদেশের প্রবাসী কবি, সাহিত্যিক, শিক্ষক, সাংবাদিক এবং নানা রাজনৈতিক মতাদর্শের রাজনৈতিক কর্মী এবং নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে নিতে পারলে অনেকগুলাে মন্তব্যের অস্পষ্টতা এবং ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়া যেতাে। টাইফয়েড জ্বর নিয়ে আমাকে লেখা শুরু এবং সম্পূর্ণ সেরে উঠার আগেই শেষ করতে হয়। তাই কারাে সঙ্গে আলােচনা করা সম্ভবপর হয়নি। আমাকে ভালােবাসা এবং আন্তরিকতা দিয়েই আয়ােজনের অভাব পূরণ করতে হয়েছে। আমার সহযাত্রী ও প্রবাসের সুখ-দুঃখের সাথী বন্ধুরা তাে পাশে ছিলেনই, তা ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রেমিক নানা লােক নানাভাবে আমাকে উৎসাহিত করেছেন।
উদয়ন ছাত্রাবাসের অনুজপ্রতিম শ্রীমান নীতীশ বিশ্বাসের ভালােবাসা এবং আন্তরিক সরলতার স্পর্শ না পেলে সেই দুঃসময়ে লেখার কাজ করা হয়তাে সম্ভব হতাে না। তার সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্বন্ধ ধন্যবাদের নয়। মুক্তধারা প্রকাশনার কর্তৃপক্ষ গ্রন্থটি প্রকাশের দায়িত্ব নিয়ে আমাকে বাধিত করেছেন এবং শ্রীঅচ্যুতানন্দ সাহা মহাশয় বানান ভুল, বাক্যের অন্বয় এবং ব্যাকরণগত প্রমাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমার মস্ত উপকার করেছেন। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির সম্পাদক এবং কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্য শ্রীদিলীপ চক্রবর্তী মহাশয় আমাকে অনুগ্রহ করে একখানা সদয় পরিচয়পত্র দিয়েছেন, তাঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যক্ষ শ্রীআশুতােষ ভট্টাচার্য মহাশয় আমাকে অত্যন্ত স্নেহের সঙ্গে গ্রহণ করেছেন। নানা বিষয়ে আমাদের আবেগ, অনুযােগ মিশ্রিত এলােপাতাড়ি মন্তব্য স্নেহ এবং ধৈর্য সহকারে শুনেছেন। আমাদের বর্তমান সংগ্রাম এবং নবজাত জাতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তার জ্বলন্ত আশাবাদ আমাদের প্রেরণায় উজ্জ্বলতা দান করেছে। তাঁর জ্ঞানদায়িনী মা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা, বাংলাদেশের প্রতি মমত্ববােধ এবং ব্যক্তিগত মহত্ত্বই মূল্যবান সময় নষ্ট করে এই গ্রন্থের মুখবন্ধ রচনার কারণ। লেখক হিসেবে আমার কোন কৃতিত্ব আছে বলে মনে করি নে।
বিনীত-
আহমদ ছফা
উদয়ন ছাত্রাবাস
কলিকাতা
২৮ জুলাই ১৯৭১