জয়পুরহাট জেলার মুক্তিযুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর
১৯৭১ সালে জয়পুরহাট জেলা তৎকালীন জয়পুরহাট মহুকুমা ৭ নং সেক্টরের অধীনে ছিল এই সেক্টরটি নিয়ন্ত্রণ করতেন মেজর নাজমুল হক বীর উত্তম (১৯৭১ সালের ১৮ মার্চ -১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর) এবং মেজর কাজী নূরুজ্জামান বীর উত্তম (১৯৭১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর-১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত)।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বড় যুদ্ধগুলোর একটি হিলির মুহাড়াপাড়া এলাকায় হয়েছিল। প্রচণ্ড যুদ্ধের পর ১১ ডিসেম্বর ৭নং সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হিলি শত্রু মুক্ত হয়।
হিলি সীমান্ত দিনাজপুর এবং ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের প্রধান যোগাযোগ কেন্দ্র হওয়ায় উক্ত অঞ্চল রণকৌশলগত কারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনায় এই অঞ্চল দখল করার জন্য পাকিস্তানিরা মরিয়া হয়ে উঠে।
১৪ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখ থেকেই তারা হিলিকে দখল করার প্রচেষ্টা চালায়। এক পর্যায়ে ১৯ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বিকালে পাকিস্তান বাহিনী হিলিতে অবস্থানরত ৩য় ইষ্ট বেঙ্গলের ক্যাপ্টেন আনোয়ার আলফা কোম্পানী ও ছাত্র জনতা মুক্তিযোদ্ধার উপর ত্রিমূখী আক্রমণ করে। পাকিস্তান বাহিনীর প্রচণ্ড আক্রমণে টিকে থাকতে না পেরে ক্যাপ্টেন আনোয়ারের দল ছত্রভঙ্গ হয়ে সন্ধ্যার দিকে ভারতের অভ্যন্তরে বকশীগঞ্জ আম বাগানে অবস্থান নেয়। এই যুদ্ধে ৩ ইষ্ট বেঙ্গলের ৬ জন সৈনিক শহিদ হন। এ অবস্থায় ২১ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে হানাদার বাহিনী হিলি দখল করে চারদিকে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন।
পাকিস্তানী বাহিনীর ৪ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স ব্যাটালিয়ন হিলি এলাকায় কংক্রিটের বাঙ্কার নির্মাণ করে এখানে খুবই শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলে। হানাদার বাহিনীর সেনারা পার্শ্ববর্তী এলাকায় নারী ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ সহ বাঙালিদের ধরে এনে এখানে নির্মম নির্যাতন করেছিল।
এক পর্যায়ে ২১ নভেম্বর ১৯৭১ তারিখে মুক্তিবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী কর্তৃক হানাদার বাহিনীর উক্ত ঘাটিঁ উৎখাত করার জন্য প্রচণ্ড আক্রমণ চালানো হয়। এই আক্রমণের সময় ভারতীয় বিমান বাহিনী গোলা বর্ষণ করেও শত্রুর শক্ত প্রতিরোধ ব্যবস্থা প্রথমে ধ্বংস করতে পারেনি। পরবর্তীতে ৯ ও ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ভারতীয় ২০২ নং মাউন্টেন ব্রিগেডের নের্তৃত্বে যৌথবাহিনী অবিরাম আক্রমণ চালিয়ে বহু মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী সেনাদের জীবনের বিনিময়ে দখলদার পাকিস্তান বাহিনীকে পরাজিত করে।
অবশেষে ১১ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে জয়পুরহাটের হিলি অঞ্চল শত্রু মুক্ত হয়।