বই-দলিলপত্র-প্রবন্ধসকল কনটেন্ট
Trending

মাওলানা ভাসানীর রচনা – খান মাহবুব

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

READ 

মাওলানা ভাসানীর রচনা

খান মাহবুব

পলল প্রকাশনী

ভাসান চরের ভাসানী। সরল জীবন যাপন করেছেন। জীর্ণজরা নিরন্ন মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে ছিলেন নিবেদিত প্রাণ। তাই তাঁর জীবনের আদ্যপান্ত জড়িয়ে ছিলো নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষ। অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে এক ভূ-কম্পিত হুংকারের নাম মওলানা ভাসানী। প্রায় শতায়ু (৮৮০-১৯৭৬) জীবনে গণ মানুষের নেতা হিসেবে আসীন ছিলেন আফরো- এশিয়ায় মুকুটবিহীন সম্রাটের আসনে। আসামের লাইন প্রথা আন্দোলন থেকে শুরু করে জীবনের শেষ সময়েও নেতৃত্ব দিয়েছেন ফারাক্কা আন্দোলনে। রাজনীতির বাঁক পরিবর্তনে মাওলানার চলার পথের পথ পরিবর্তন হলেও বাংলার খেটে খাওয়া মানুষের অধিকার রক্ষায় ছিলেন অতন্দ্রপ্রহরী। গণমানুষের নেতা হওয়ার কারণে রাষ্ট্র নায়করা নানা কালপর্বে তার উপদেশ ও পরামর্শ গ্রহণ করেছেন। ভার কাঁধে ভর করে অনেকেই ক্ষমতায় বসেছেন কিন্তু মওলানা ভাসানী সব সময় ক্ষমতা ও নির্বাচন থেকে নিজে দৃরে থেকেছেন। মওলানা ভাসানীর জীবনাচরণে সবকিছুকেই ছাড়িয়ে গেছে মানুষের ইহলৌকিক মুক্তির জন্য সামাজিক সমতা ও ভেদহীন জাতি গঠণের প্রাণান্তকর চেষ্টা। পাশাপাশি ইসলামী জীবনাচরণে পরলৌকিক মুক্তির অভিলাষ লক্ষণীয়। ইসলামের মূল ধারাকে ধারণ করে আচারসর্বস্থ ধর্মীয় অনুশাসনের বাইরে ইসলামের মূল অন্তদর্শী ও অতলস্পর্শী সারকথার প্রচারে তার নিজস্ব প্রয়াস ছিলো। কারণ মওলানা ভাসানী প্রথম জীবনে তাসাউফের সাধনা ও ইসলামী “কেতাবি শিক্ষা রপ্ত করেছিলেন। তার চিন্তাকল্পের বহিঃপ্রকাশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় নিহিত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কেমন হওয়া উচিত তাঁর চিন্তার স্ফূরণ বিশ্লেষণে তা পাওয়া যায়। যা ছিলো গতানুগতিকতার বাইরে এক আধুনিক ইসলামের চেতনাসমৃদ্ধ। যে ইসলামে চিন্তা করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষা ব্যবস্থার।

মওলানা ভাসানী চিন্তা করেছেন তাঁর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররা কেবল কেতাবি শিক্ষা নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গন থেকে উৎপাদন করবে নিজেদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ও বস্ত্র। হাতে-কলমে দীক্ষা নিবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন উৎপাদন ব্যবস্থার। যা চিরচেনা ইসলামী ব্যবস্থা থেকে রঙে ও বৈশিষ্ট্যে আলাদা ও আকর্ষণীয়। মওলানার পালনবাদ, রবিয়াতের ভূমিকা, সর্বশেষ জীবনের শেষ অভিভাষণ “খোদাই খিদমতগার’ নিবন্ধে তার বিস্ময়কর প্রতিভার সাক্ষর মেলে। অনুধাবন করা যায় মওলানা ভাসানী কতটা স্বশিক্ষিত ছিলেন আত্ম-প্রজ্ঞায়। মওলানার জীবনের অনেক ঘটনা সাধারণ মানুষকে খটকায় ফেলে দেয়। বিশেষত সমাজতান্ত্রিক ভিতে গড়া চীন ও চীনের বিপ্লাবের নেতা মাও-সে-তুঙ- এর প্রতি মওলানার অনুরক্তি। পাশাপাশি ধর্মীয় অনুশাসনের প্রতি মান্যতা ও ভক্তি। একদিকে ছিলো তার সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের চিন্তা, অন্যদিকে ব্যক্তি জীবনে পীরআলী, মুরিদ পড়ানো ও ঝাড় ফুক ইত্যাদি। ফলে তাঁকে নিয়ে দোদুল্যমান অবস্থায় থেকেছে অনেকে । তবে তাকে ঘিরে ছিলো ডান-বাম, আস্তিক-নাস্তিক সবাই। মওলানা ভাসানী সুলিখিত নিজস্ব রচনা তুলণামূলকভাবে কম পাওয়া যায়। তবে তার ভাষণ ও বিবৃতি প্রসাদ গুণে সমৃদ্ধ । বিভিন্ন সময়ে মওলানার লেখা কিছু পুস্তিকা প্রকাশ হলেও সংরক্ষণের অভাবে কপি পাওয়া মুশকিল। মওলানার রচিত গ্রন্থ হিসেবে ‘মাও-সে-তুঙ এর দেশে’-কে বিবেচনা করা হয়। মওলানা ভাসানীর রচনা নামীয় এই বইতে প্রাপ্ত লেখার বেশ কিছু স্থান পেয়েছে। সাথে মওলানার উল্লেখযোগ্য ভাষণ ও বিবৃতিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। মওলানার জীবনপঞ্জি ও কিছু স্থির চিত্রও এই বইয়ে সংযুক্ত আছে।

মওলানা ভাসানীর রচনা নামীয় এই বইতে প্রাপ্ত লেখার বেশ কিছু স্থান পেয়েছে। সাথে মওলানার উল্লেখযোগ্য ভাষণ ও বিবৃতিকে সংযুক্ত করা হয়েছে। মওলানার জীবনপঞ্জি ও কিছু স্থির চিত্রও এই বইয়ে সংযুক্ত আছে। মওলানা ভাসানীর সময়কালে সকল আন্দোলন সংগ্রামে তিনি ছিলেন পুরোধা পুরুষ। সংগঠক হিসেবে তার জুড়ি মেলা ভার। যে কোন ইস্যুকে কেন্দ্র করে এক লহমায় আন্দোলনের দাবানল তৈরি করার এক জাদুকরী চমক ছিল তার। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের তিনিই ১৯৫৭ সালে কাগমারী সম্মেলনে আসসালামু আলাইকুম বলেছিলেন। আরো পরে ঘোষণা দিয়েছিলেন স্বাধীন পূর্ব পাকিস্তানের মওলানার সময়কালে তিনি মানব-মুক্তির এক বার্তা বাহক। আজন্ম সংগ্রাম করেছেন খেটে খাওয়া মানুষের মুখে প্রতিবাদের ভাষা তুলে দিতে । তাই ইতিহাসের খেরোখাতার পাতা উল্টিয়ে ঝকঝকে তকতকে সফেদ এক মওলানা ভাসানীকে পাওয়া যায়। এই বইয়ের লেখা সংগ্রহের ব্যাপারে মওলানা ভাসানীর দৌহিত্র মোঃ মাহমুদুল হক সানু যে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার পরিচয় দিয়েছেন তা তার নানার প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ বটে। মওলানাকে নিয়ে লেখা বিভিন্ন বই থেকেও কিছু তথ্য সংগৃহিত হয়েছে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

– খান মাহবুব

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button