৭১’এর জেনোসাইড ও নির্যাতন আর্কাইভবই-দলিলপত্র-প্রবন্ধসকল কনটেন্ট
Trending

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শিরোমনি গোলাম আযম বৃত্তান্ত

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

মানবতাবিরোধী অপরাধীদের শিরোমনি গোলাম আযম বৃত্তান্ত

বৃন্দ-লেখকঃ সাব্বির হোসাইন, এস. এ. খান

মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ

প্রথম প্রকাশঃ ১১ আগস্ট, ২০১৫

“বাঙালিরা কখনও জাতি ছিল না”

– গোলাম আযম (দৈনিক পাকিস্তান, ১৩ এপ্রিল, ১৯৭০)

একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারদের প্রধানতম দোসর ছিল জামায়াত ইসলামীর আমির গোলাম আযম।

গোলাম আযম পাকিস্তানী ও  তাদের এদেশীয় দোসরদের দ্বারা একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির বিরুদ্ধে সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্যতম রূপকার এবং তার রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী ও তার অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির) মানবতাবিরোধী অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল।

গোলাম আযমের জন্ম ও উত্থানঃ –

একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধী গোলাম আযম ১৯২২ সালের ৭ই নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বীরগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহন করে।

মাদ্রাসায় প্রাথমিক পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করার পর ১৯৫০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রী সমাপ্ত করে ১৯৫০-১৯৫৫ সাল পর্যন্ত রংপুর কারমাইকেল কলেজে শিক্ষকতা করে।

১৯৫৪ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীতে যোগ দেয় এবং ১৯৫৭-১৯৬০ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী পদে বহাল থাকে। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত গোলাম আযম জামায়াতে ইসলামীর আমীর হিসাবে সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ভাষাসৈনিক গোলাম আযম প্রপোগান্ডা:

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা স্বাধীন বাংলাদেশে পুর্নবাসিত হয়।
সে প্রক্রিয়ায় একাত্তরের বাঙালি নিপীড়নের অন্যতম রূপকার গোলাম আযমকে পুর্নবাসিত করার উদ্দেশ্যে কিছু প্রোপোগান্ডা সৃষ্টি করা হয়; তার মধ্যে অন্যতম একটি হলো- গোলাম আযম একজন ভাষা সৈনিক।

কিন্তু ইতিহাস, তথ্য উপাত্ত ও প্রমাণ ভিন্ন কথা বলে; সত্য অনুসন্ধানে সেদিকে আলোকপাত করছি-

২৭ নভেম্বর, ১৯৪৮; পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবেশে ভাষণ দেয়। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা একটি মানপত্র পাঠ করে। ওই মানপত্রে অন্যান্য বিষয়ের সাথে একটি অংশে বাংলা ভাষা নিয়ে দাবি জানানো হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান চৌধুরী মানপত্রটি লিখেছিলেন।

মানপত্রটি ডাকসু কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের* ভাইস প্রেসিডেন্ট অরবিন্দ বোসের পাঠ করার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি চরম সাম্প্রদায়িক ও জাতিগত বিদ্বেষ-অবিশ্বাসের কারনে মানপত্রটি মুসলমান ছাত্র হিসেবে ডাকসু কেন্দ্রীয় ছাত্র ইউনিয়নের* অনির্বাচিত জেনারেল সেক্রেটারী গোলাম আযমকে পড়তে দেয়া হয়। (সূত্র: ‘জীবনে যা দেখলাম’ – গোলাম আযম)

* বর্তমান ডাকসু (DUCSU – Dhaka University Central Student’s Union) নামে পরিচিত ছাত্র প্রতিষ্ঠানটিকে সেকালে Dhaka University Student’s Union বলা হতো।

এটা সুস্পষ্ট যে, পরিস্থিতির কারনে গোলাম আযম সেই মানপত্র পাঠ করেছিল।

এখানে দুটো পয়েন্ট চিহ্নিত করা যায়-

০১. বাংলা ভাষা আন্দোলনে তার সম্পৃক্ততা কতটুকু?
০২. মানপত্রে বাংলা ভাষা নিয়ে যে দাবি জানানো হয়েছিল, তা কি গোলাম আযম সমর্থন করতো?

প্রথম প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করে পাওয়া যায়:

বাংলা ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কারন, সেদিন মানপত্রটি বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তাকে পড়তে হয়েছিল। মানপত্রে বাংলা ভাষার দাবিটি সে নিজেই সমর্থন করতো না (এর প্রমাণ দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরে দেয়া হবে)।

একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, বাংলা ভাষা অান্দোলনের কোথাও তার উপস্থিতি ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না- ভাষা সংগ্রামের কোন স্তরের আন্দোলনে তার উপস্থিতি নেই; ভাষা আন্দোলনের জন্য গঠিত কোন কমিটিতে সে ছিল না; ভাষা সংগ্রামের কোন সভা বা মিছিলে তার উপস্থিতি নেই; সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচীতে প্রথম সারির সব ভাষা আন্দোলনকারীদের উপস্থিতি থাকলেও, সেখানে তার উপস্থিতি নেই; যেখানে ভাষা আন্দোলনের সময় আন্দোলনকারী গ্রেফতার হওয়া ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার হওয়া খুব স্বাভাবিক ঘটনা, সেখানে সে একবারো গ্রেফতার বা বহিষ্কার হয়নি; ২১ ফেব্রুয়ারি ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গের আন্দোলনের কোন অংশে সে উপস্থিত ছিল না।

তাই, এটি স্পষ্ট, বাংলা ভাষা আন্দোলনে গোলাম আযমের কোন সম্পৃক্ততা ছিল না।

দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর অনুসন্ধান করে দেখা যায়:

মানপত্রে বাংলা ভাষা নিয়ে যে দাবি জানানো হয়েছিল, তা গোলাম আযম সমর্থন করতো না।
এর প্রমাণ হিসেবে বেশ কয়েকটি দলিল উপস্থাপন করা যাক:

০১.
১৯৭০ সালের ২০ জুন দৈনিক আজাদ পত্রিকার পঞ্চম পাতায় একটি প্রতিবেদন দেখা যায়, গোলাম আযম নিজেই বলছে যে, বাংলা ভাষা আন্দোলন একটি ভুল ছিল।

গোলাম আযমের বক্তব্য ছিল-

মুছলমানদের অধিকাংশ তম্মুদিন ও ধর্মীয় জ্ঞানের ভাণ্ডার উর্দু ভাষায় সংরক্ষিত রহিয়াছে।জাতীয় ভাষার প্রশ্ন উঠার পর পূর্ব পাকিস্তানে বাংলা ভাষার জন্য আন্দোলনকারীদের মধ্যে তিনিও একজন ছিলেন কিন্তু পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার দৃষ্টিকোন থেকে তাহা মোটেও সঠিক কাজ হয়নি।কারণ উর্দু ভাষা ব্যাপকভাবে প্রচলিত এবং পাক ভারতের সকল প্রদেশের মুছলমানরা উহা বুঝিতে পারে।উর্দু হচ্ছে এমন একটা ভাষা যার মাধ্যমে ইসলামী শিক্ষার উপযুক্ত প্রচার ও প্রসার সম্ভব।উর্দু পাক-ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের সাধারণ ভাষা এবং এতে তাদের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্পদ সংরক্ষিত রয়েছে।

০২.

মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান সামরিক বাহিনী শহীদ মিনার গুঁড়িয়ে দেয়।

এই গর্হিত কাজকে সমর্থন করে দেয়া গোলাম আযমের একটি বিবৃতি ১৯৭১ সালের ১৬ জুলাই জামায়াতের মুখপাত্র দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকায় বের হয়।

[ সূত্র: মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা – আলী আকবর টাবী ]

০৩.

গোলাম আযম তার আত্মজীবনী গ্রন্থ ‘জীবনে যা দেখলামে’ নিজ জবানীতেই উর্দুর সাফাই গাইছে-

“উপমহাদেশে যারা ইসলামের কর্মসূচী নিয়ে চর্চা করেন, তাদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের মাধ্যমই হলো উর্দু।শ্রীলঙ্কা, নেপাল, আফগানিস্তান ও মায়ানমারসহ গোটা উপমহাদেশের মুসলমানদের কমন ভাষা একমাত্র উর্দুই।উচ্চশিক্ষিতদের জন্য ইংরেজি কমন ভাষা হলেও সকলের জন্য উর্দুর কোনো বিকল্প নেই।মুসলমানদের জন্য বিভিন্ন কারণে এ ভাষায়ই সবচেয়ে সহজে ভাবের আদান-প্রদান সম্ভব।বিশেষ করে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মুসলমানদের বিরাট জনশক্তি ঐসব দেশে রয়েছে।তাদের মধ্যে যারা ইসলামী কর্মকান্ডে জড়িত, তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ আছে।উপমহাদেশের কোন দেশ থেকে কোন ইসলামী ব্যক্তিত্ব আসলে তারা যৌথ সমাবেশের আয়োজন করে থাকেন।তাদের পারস্পরিক যোগাযোগ ও মতবিনিময়ের মাধ্যম প্রধানত উর্দু ভাষা।তাই বাংলাদেশীরাও উর্দু মোটামুটি বুঝে এবং কিছু কিছু বলতেও পারে।”

সুতরাং, এটি স্পষ্ট, মানপত্রে বাংলা ভাষা নিয়ে যে দাবি জানানো হয়েছিল, তা গোলাম আযম সমর্থন করতো না।

অর্থাৎ, এটি শ্বাশ্বত সত্য, গোলাম আযম ভাষা সৈনিক ছিল না।

একাত্তরে গোলাম আযমঃ – [১১]

১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান জামাতে ইসলামী তার অঙ্গসংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (বর্তমানে ছাত্র শিবির) এবং অন্যান্য অধঃস্তন সংগঠন নিয়ে সক্রিয়ভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধীতা করে এবং পাকিস্তানী বাহিনীর দোসর হিসাবে মানবতাবিরোধী কার্যক্রম চালায়।

২৫ মার্চ কাল রাতে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক নিরীহ নিরস্ত্র বাঙ্গালির উপর ‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে গণহত্যা চালাবার পর গোলাম আযম ৬ এপ্রিল, ১৯৭১ গভর্নর টিক্কা খানের সাথে সাক্ষাৎ করে তাদের অভিযানের প্রতি পূর্ন সমর্থন ব্যাক্ত করে ও তার দলের পক্ষ থেকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দেয়।

এর আগে ৪ এপ্রিল গোলাম আযম গভর্নর টিক্কা খানের সাথে বৈঠক করে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে গনহত্যা ও দেশের সাধারন মানুষের উপর অমানবিক নির্যাতনে সর্বতভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য একটি বাহিনী গঠনের পরিকল্পনা করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ৯ এপ্রিল ১৯৭১ খাজা খয়েরউদ্দিন কে আহ্বায়ক করে ১৪০ সদস্যের ‘শান্তিকমিটি’ গঠন করা হয়।

গোলাম আযম ‘আমীর’ হিসাবে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী ছাত্র সংঘের সাংগঠনিক কাঠামো এবং কার্যক্রম নির্ধারন ও নিয়ন্ত্রন করা ছাড়াও শান্তি কমিটি, রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনী গঠনে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।

এসকল বাহিনী পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে একাত্ম হয়ে বাংলাদেশের সাধারন মানুষের উপর ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ, ধর্ষন, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগসহ অন্যান্য মানবতাবিরোধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।

১৯৭১ এর বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সভা, সেমিনার ও রেডিও বার্তায় গোলাম আযম মুক্তিযোদ্ধাদের ‘দেশোদ্রোহী’, ‘ভারতীয় চর’, ‘দুষ্কৃতিকারী’ আক্ষা দিয়ে পাকিস্তানের দোসর রাজাকার, আল-বদর বাহিনীকে নির্দেশ দেয় তাদের ‘ধ্বংস’ করার জন্য।

০৮ এপ্রিল, ১৯৭১:

পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামের আমীর অধ্যাপক গোলাম আযম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল খালেক এক যুক্ত বিবৃতিতে বলে:

“ভারত পূর্ব-পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করছে।

ভারতীয় বা পাকিস্তান-বিরোধী এজেন্টদের বা অনুপ্রবেশকারীদের যেখানেই দেখা পাওয়া যাবে দেশপ্রেমিক পূর্ব-পাকিস্তানীরা তাদের নির্মূল করবে।”

২১ জুন, ১৯৭১:
লাহোরে জামায়াতে ইসলামের কর্মীদের জন্য দেয়া এক বক্তব্যে গোলাম আযম পাকিস্তান সেনাবাহিনীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানায়। পাকিস্তান সশস্ত্র বাহিনীর এ ছাড়া কোন উপায় ছিলা না বলেও সে ঘোষনা দেয়।

১৩ ও ১৫ জুলাই, ১৯৭১:

রংপুর জামাতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মিয়া তোফায়েল মোহাম্মদ ১৩ জুলাই মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী ও পাকিস্তানের শত্রু আখ্যা দিয়ে তাদের হত্যা করার আহ্বান জানায়।

একদিন পরেই ১৫ জুলাই গোলাম আযম ও  মিয়া তোফায়েল গভর্নর হাউসে টিক্কা খানের সাথে দেখা করে।

১৪ আগস্ট, ১৯৭১: 

পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে পাকিস্তানে যায় গোলাম আযম, সেখানে সে পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষার উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণের মধ্যে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব জোরদার করার আহ্বান জানায়।

গোলাম বলে-

“জাতি যে চরম সঙ্কটের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এবারের স্বাধীনতা দিবস পালন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

আমাদের আদর্শের প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতাই জাতীয় সঙ্কটের মূল কারণ”।

১৮ আগস্ট, ১৯৭১:

লাহোরে গোলাম আযম মুক্তিযোদ্ধাদের দুষ্কৃতকারী সম্বোধন করে পাকিস্তানের ভারত আক্রমন করার পূর্বাভাস দিয়ে বলে-

“ভারত দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) সাহায্য করছে।

তাই, পাকিস্তানের উচিত কাল বিলম্ব না করে ভারত আক্রমণ করা এবং আসাম দখল করা।”

২৩ আগস্ট, ১৯৭১: 

লাহোরে গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভারতীয় চর উল্লেখ করে বলে-

“পূর্ব-পাকিস্তানে যা ঘটছে তা ভারত ও তার চরদের ষড়যন্ত্রেরই ফল। একমাত্র ইসলামের শক্তিই দেশের অখন্ডতা রাখতে পারে।”

এই বক্তব্যে গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষে “জামাত ও ছাত্র সংঘের (বর্তমানে ইসলামী ছাত্র শিবির)” সক্রিয় অংশগ্রহণের কথা স্বীকার আরো বলে-

“যারা জামাতে ইসলামীকে দেশপ্রেমিক সংস্থা নয় বলে আখ্যায়িত করছে, তারা হয় জানে না বা স্বীকার করার সাহস পায় না যে, ইসলামের আদর্শ তুলে ধরা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবর্তীণ হওয়ায় পূর্ব-পাকিস্তানে জামাতের-ছাত্র সংঘের বিপুল সংখ্যক কর্মী দুষ্কৃতকারীদের (মুক্তিযোদ্ধা) হাতে প্রাণ হারিয়েছে”।

২৮ আগস্ট, ১৯৭১:

পেশোয়ারে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী কর্তৃক বাঙালি গণহত্যা-ধর্ষণের প্রশংসা করে গোলাম আযম বলে-

“শুধুমাত্র ইসলামী আদর্শই দেশের (পাকিস্তানের) দুই অংশের ঐক্য বজায় রাখতে পারে।

পাকিস্তানের অখন্ডতা রক্ষায় পরিস্থিতি বিবেচনায় পূর্ব-পাকিস্তানে সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা প্রশংসনীয়।”

৩১ আগস্ট, ১৯৭১:

গোলাম আযম বলেছিল-

“কোনো ভালো মুসলমান তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থক হতে পারে না।”

গোলাম আযম তার পাকিস্তান সফরের সময় হায়দারাবাদে এক সাংবাদিক সম্মেলন সহ বিভিন্ন সময় বলে-

বেআইনী ঘোষিত আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত ও সরকার কর্তৃক বহাল ঘোষিত ৮৮ জন সদস্যের অধিকাংশই পাকিস্তানে নেই। তাই, পূর্ব পাকিস্তানে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে সদস্যপদে নতুন করে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা হোক এবং পূর্ব পাকিস্তানে সকল বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ ঘোষণা এবং তাদের নেতৃবৃন্দকে শাস্তি দেয়া হোক।

কোন ভালো মুসলমানই তথাকথিত ‘বাংলাদেশ আন্দোলনের’ সমর্থক হতে পারে না। বর্তমান মুহূর্তের আশু প্রয়োজন হচ্ছে পূর্ব পাকিস্তানে দেশপ্রেমিক ও ইসলাম-প্রিয় লোকজনের হাত শক্তিশালী করা। পূর্ব পাকিস্তানে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের নিমূর্ল করার জন্যে একমনা ও দেশপ্রেমিক লোকরা একত্রে কাজ করে যাচ্ছে। রাজাকাররা খুবই ভালো কাজ করছে। এসব লোক (রাজাকার) পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাপকভাবে সাহায্যে করছে এবং দুষ্কৃতকারীদের রাষ্ট্র বিরোধী কার্যকলাপ ও বিদ্রোহীদের দমনে সেনাবাহিনী প্রশাসনকে পূর্ণ সহেযাগিতা দান করছে।

পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্ব-পাকিস্তানে ইসলাম রক্ষায় ও পাকিস্তানের ঐক্য রক্ষায় সফলভাবে কাজ করছে। পূর্ব পাকিস্তানের পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসছে।

১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১:

গোলাম আযম এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের বিরোধিতা করার জন্যে গঠিত পাকিস্তানী প্রতিনিধি দলে খান এ সবুর ও ফজলুল কাদের চৌধুরীকে অর্ন্তভুক্ত করার দাবি জানায়।

২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১:

জামাত মন্ত্রী পরিষদের সদস্যদের এক সংবর্ধনা গোলাম আযম বলে-

জামাতের কর্মীরা মুসলিম জাতীয়তাবাদের আদর্শকে বিসর্জন দিয়ে বাঙালী জাতীয়তাবাদকে মেনে নিতে রাজী নয়।

৩ অক্টোবর, ১৯৭১:

ঢাকায় পূর্ব পাকিস্তান জামাতে ইসলামীর মজলিশে সুরার বৈঠক হয়। এতে গোলাম আযম জনগণের প্রতি ইসলামের পবিত্র আদর্শ আবাসভূমি পাকিস্তান রক্ষার জন্যে সব রকমের ত্যাগ স্বীকারের আহবান জানায়।

১৬ অক্টোবর, ১৯৭১:

বায়তুল মোকাররমে এক সভায় গোলাম আযম বলে-

মুসলিমদের অস্তিত্ব অক্ষুন্ন রাখতে হলে পাকিস্তানের সংহতি অবশ্যই টিকিয়ে রাখতে হবে।

গোলাম আরো বলে-

পূর্ব-পাকিস্তানে এখন জানমাল-ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই। এ পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্যে প্রথমতঃ মওলানা ভাসানী, যাদু মিয়া, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ এবং তাদের পার্টি ও ছাত্র সংগঠন, আতাউর রহমান খান ও শাহ আজিজুর রহমান, দ্বিতীয়তঃ জনাব ভূট্টো এবং তৃতীয়তঃ শেখ মুজিবের আর্দশ ও অদূরদর্শিতা দায়ী। বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ‘তথাকথিত বাংলাদেশের’ ভুয়া শ্লোগানে কান না দিয়ে পাকিস্তানকে ইসলামী আদর্শে নতুনভাবে গড়ে তুলতে হবে।

একাত্তরের নভেম্বরে পূর্ব-পাকিস্তানে প্রাদেশিক পরিষদের লোক-দেখানো উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, যার মাধ্যমে জামাত ও পাকিস্তানপন্থী দলগুলোর মাঝে আসন বন্ট করা হয়; এতে নির্বাচিত ৭৬ জন সদস্যের মধ্যে মধ্যে জামাতের সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। টাঙ্গাইল থেকে পরিষদ সদস্য হয়েছিল গোলাম আযম; এনিয়ে দৈনিক পাকিস্তানে ৬ নভেম্বর খবর প্রকাশিত হয়।

৬ নভেম্বর, ১৯৭১:

গোলাম আযম এক বিবৃতিতে ৭ নভেম্বরকে যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘আলবদর দিবস’ পালনের জন্যে সকলের প্রতি আহ্বান জানায়।

৮ নভেম্বর, ১৯৭১:

ঢাকা জেলার ইউনিয়ন ও থানা শাখার জামাতের সভাপতিদের নিয়ে সিদ্দিকবাজারে অনুষ্ঠিত এক সভায় গোলাম আযম বলে-

দেশের অভ্যন্তরে দুষ্কৃতকারীদের হামলা, সীমান্তে আক্রমণাত্মক কার্যকলাপ পরিচালনার জন্যে ব্রাহ্মণ্য-সাম্রাজ্যবাদী ভারতকে হুঁশিয়ার করা হচ্ছে। পূর্ব-পাকিস্তানে দৃষ্কৃতকারী পাঠিয়ে হিংসাত্মক ও মানবতাবর্জিত কার্যকলাপ থেকে ভারত বিরত না হলে, পূর্ব পাকিস্তানের মুসলমানরা অমিততেজী পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে ভারতীয় যুদ্ধবাজদের চরম শিক্ষাদান এবং তাদের অস্ত্রবলকে স্তব্ধ করে দেবে বলে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের আরো সচেতন ও কর্তব্যপরায়ণ এবং সতর্ক হওয়া প্রয়োজন; বিচ্ছিন্নতাকামী দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

পাকিস্তানের পরাজয়ের লক্ষণ স্পষ্ট হতে থাকায় মাওলানা মওদুদীর পরামর্শে গোলাম আযম ও জামাতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর (সহসভাপতি) মওলানা আবদুর রহীম ১৯৭১ সালের ২২ নভেম্বর ১৯৭১ বিমানে করে লাহোর চলে যায়। এর ২৫ দিন পরই বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করে এবং ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ ও বাঙালির এই মহাশত্রু গোলাম আযম দেশে ফিরতে পারেনি।

২৩ নভেম্বর, ১৯৭১:

পাকিস্তান রক্ষার সংগ্রামে তাদের ভূমিকার জন্যে সংবর্ধনা দেয়া হয়।

২৩ নভেম্বর, ১৯৭১:

লাহোরে গোলাম আযম পূর্ব-পাকিস্তানে পাকিস্তানের প্রায় নিশ্চিত পরাজয়ের থেকে উদ্ধার পেতে ইসলাম ও পাকিস্তানের ঐক্যের স্বার্থে রাজনৈতিক দলাদলি ভুলে গিয়ে কার্যকরভাবে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যে দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান।

২৭ নভেম্বর, ১৯৭১:

রাওয়ালপিন্ডিতে গোলাম আযম বলে-

পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ভারতের বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়ে যাবে এবং তাদের পবিত্র মাতৃভূমির এক ইঞ্চি জমিও ভারতকে দখল করে নিতে দেবে না।

১ ডিসেম্বর, ১৯৭১:

রাওয়ালপিন্ডিতে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে লাহোরে ফিরে এসে গোলাম আযম বলে-

পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ কখনো তাদের দাবির প্রতি মিসেস গান্ধীর সমর্থন চায়নি। পাকিস্তানের অস্তিত্বের জন্যে অবিলম্বে ভারতের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করা হোক।

ঢাকায় পাকিস্তানি জেনারেলদের সাথে গোলাম আযম, মৌলভি ফরিদ, খাজা খায়ের, শফিউল ইসলাম, মওলানা নুরুজ্জামান, নুরুল আমিনের মিটিং (এপ্রিলের ১ম সপ্তাহ, ১৯৭১):


[ জামায়াতে ইসলাম ও এর নেতা-কর্মীদের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী নানান কর্মকান্ডের প্রমাণ হিসেবে তাদের মুখপাত্র পত্রিকা দেখুন, মুক্তিযুদ্ধে দৈনিক সংগ্রামের ভূমিকা – আলী আকবর টাবী ]

একাত্তর পরবর্তী গোলাম আযম ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তার অপতৎপরতাঃ – 

মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের পরপরই গোলাম আযম স্বাধীন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা করতে থাকে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরপরই ১৯৭২ সালে গোলাম আজমের নেতৃত্বে ‘পূর্ব পাকিস্তান পুনরুদ্ধার সপ্তাহ’ পালিত হয়।

একই বছর গোলাম আযম হজ্জ্ব করার জন্য সৌদি আরব গমন করে; কিন্তু প্রকৃত মিশন ছিল: পাকিস্তান-বাংলাদেশ কনফেডারেশান গঠনে আরব রাষ্ট্রগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের সহায়তা ও সমর্থন আদায়। এই উদ্দেশ্যে গোলাম জেদ্দা, কুয়েত, আবুধাবী, দুবাই, বৈরুত সফর করে।

১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারী পাশ হয় দালাল আইন এবং এর গেজেট বিজ্ঞপ্তিতে চিহ্নিত দালালদের ১১ নাম্বার ছিল গোলাম আযম।

বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিলে একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত থাকার দায়ে ১৯৭২ সালের বাংলাদেশ নাগরিকত্ব আদেশের ৩ ধারা অনুসারে গোলাম আজমের নাগরিকত্ব বাতিল করে।

৭৩’এ গোলাম আযম প্রো-পাকিস্তানী-বাঙালীদের সংগঠিত করার জন্য লন্ডন যায়। এই সময় তার নেতৃত্বে পূর্ব পাকিস্তান জামাতের মুখপত্র “দৈনিক সংগ্রাম” সাপ্তাহিক হিসেবে লন্ডনে প্রকাশিত হয়।

লন্ডনের কাজ শেষ করে গোলাম আযম পাকিস্তান ফিরে যায়। সে সময় পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভূট্টো বাংলাদেশের স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়ে পাকিস্তানের সব রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত আহ্বান করলে, পাকিস্তান জামাত-ই-ইসলামীর মজলিশে শুরার বৈঠকে গোলাম আযম স্পষ্ট ভাষায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়ার বিরোধিতা করে।

বাংলাদেশকে স্বীকৃতি বিরোধিতা করে গোলাম বলে-

“বাংলাদেশের আদর্শ কি, সে ধারণা আমার নেই।

শুধু জানি, বাংলাদেশ একটা জমি, একটা মাটি; মাটির কোনো আদর্শ থাকে না।

এই ভূখন্ডের অধিবাসীরাই ঠিক করবে, কোন আদর্শের ভিত্তিতে দেশ চলবে।”

১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে লিবিয়ার বেনগাজিতে এক ইসলামী পররাষ্ট্র সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আমন্ত্রিত না হয়েও গোলাম আযমে সম্মেলনে উপস্থিত হয় এবং স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য আহ্বান জানায়।[১০]

এছাড়া গোলাম আযম বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ‘গোলামির জিঞ্জির’ বলে অভিহিত করে এবং পাকিস্তান পুনঃরুদ্ধারে ইসলামী উম্মাহর সাহায্য কামনা করে।[১০]

১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে সে সৌদি আরব ভ্রমন করে এবং তৎকালীন সৌদি বাদশাহ ফয়সালের সাথে সাক্ষাৎ করে। সাক্ষাতে সে বলে বাংলাদেশে ভারতীয় হিন্দুরা মসজিদ দখল করে মন্দির তৈরী করেছে, কোরআন পুড়িয়েছে এবং মুসলিমদের হত্যা করেছে। এধরনের অপপ্রচার চালিয়ে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি না দেয়ার জন্য বাদশাহ ফয়সালকে অনুরোধ করে। এছাড়া মধ্যপ্রাচ্য থেকে পাকিস্তান একত্রিত করার কথা বলে ফান্ড গঠন করেছিল।

গোলাম আযমের বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন, পূনর্বাসন ও গণআদালতে তার বিচারঃ –  [৮]

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হবার পর বাংলাদেশের রাজনীতির চালচিত্র বদলে যায়। প্রো-পাকিস্তানী বাঙালিদের সমন্বয়ে সরকার গঠিত হয়। এই সময় গোলাম আযম বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পাবার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে।

১৯৭৬ সালের ১৮ জানুয়ারি তৎকালীন ‘জিয়াউর রহমান অধীনস্ত বাংলাদেশ সরকার’ এক প্রেসনোট জারি করে, যাতে ‘নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে’ এমন ব্যাক্তিরা তাদের নাগরিকত্ব ফিরে পেতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে পাবে। গোলাম আযম নাগরিকত্ব ফিরে পাবার জন্যে আবেদন করে। গোলাম আজমের মত রাজাকার-শিরোমনিকে নাগরিকত্ব দেবার সাহস ‘জিয়াউর রহমান অধীনস্ত প্রোপ-পাকিস্তানী সরকার’ করেনি, তবে তারা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ পদ্ধতি অবলম্বন করে।

১৯৭৮ সালের ১১ জুলাই, তৎকালীন বাংলাদেশ সরকার গোলাম আযমকে তিনমাসের জন্য বাংলাদেশের ভিসা দেয়; কারন হিসেবে দেখানো হয়, তার মা অসুস্থ।

১৯৭৮ সালের ১১ আগস্ট গোলাম আযম পাকিস্তানের পাসপোর্ট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রবেশ করে।

বাংলার সাধারন মানুষ তার দেশে ফিরে আসার ঘটনা মেনে নেয়নি। মনে প্রাণে ঘৃনা করেছে মানুষরুপী এই হায়েনাকে সবসময়।

১৯৮১ সালের ১ জানুয়ারী এই ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। সেদিন বায়তুল মোকাররাম মসজিদে হঠাৎ হাজির হয় গোলাম আযম। বাংলাদেশের অন্যতম স্বাধীনতাবিরোধী, পাক-বাহিনীর দোসর সবার সাথে এক কাতারে নামাজ পড়বে এটা সেদিন মুসল্লিরা মেনে নিতে পারেনি। এই মুসল্লিদের একজন সেদিন পায়ের স্যান্ডেল খুলে গোলাম আজমের মুখে আঘাত করে। এছাড়া সেদিন তাকে সেখানে কিল-ঘুসিও দিয়েছিল মসজিদে নামাজ পরতে আসা জনগন। পরদিন ‘দৈনিক সংবাদ’ পত্রিকায় সে খবর ছবিসহ ছাপা হয়।[৬ঃ১]

১৯৮১ সালে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাত দফা কর্মসূচীর দ্বিতীয়টি ছিল – গোলাম আযম সহ চিহ্নিত সকল রাজাকার, আল-বদর দের দেশদ্রোহিতার অপরাধে শাস্তি প্রদান করতে হবে। অন্যথায় তাদেরকে গণ-আদালতে বিচারের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।

১৯৯১ সালে গনতন্ত্রের সুযোগে স্বীকৃত ও স্বঘোষিত দেশবিরোধী রাজনৈতিক সংগঠন জামায়াতে ইসলাম ভোটাধিকারের রাজনীতিতে প্রবেশ করে।

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর পাঁচ দিনব্যাপী ‘মজলিশে শুরা’র বৈঠকে গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামের আমীর ঘোষনা করা হয়। একাত্তরে পাকিস্তানে পলায়ন করার পর ১৯৭৮ এ বাংলাদেশে ফিরে এসে জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেই দিয়েছিল তবে তা পর্দার আড়ালে থেকে। তারপর ১৯৯১ সালের শেষে আবার প্রকাশ্যে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করে জামায়াতে ইসলামের ‘আমীর’ হিসাবে।

উল্লেখ্য ১৯৭৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের নাগরিক হিসাবে কোন বৈধ ভিসা বা আদালতের অনুমতি ছাড়াই সে বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করে। এ সময়ের মধ্যেই সে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতা হিসাবে বাংলাদেশে রাজনীতি শুরু করে। [৯]

গোলাম আযমকে ‘আমীর’ ঘোষনার প্রতিবাদে সমাবেশ ও মিছিল করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গনতান্ত্রিক ছাত্র ঐক্য। ১ মে ১৯৯১ থেকে সারা দেশে ‘রাজাকার আল-বদর প্রতিরোধ সপ্তাহ’ পালন করে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারী গোলাম আযম সহ চিহ্নিত রাজাকার, আল-বদর, ঘাতক-দালালদের বিচার ও শাস্তির দাবিতে শহীদ জননী জাহানার ইমামকে আহ্বায়ক করে গঠিত হয় ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি’।

কমিটিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় স্বাধীনতার ২১তম বার্ষিকীতে ২৬ মার্চ ১৯৯২ গণআদালতে একাত্তরের ঘাতক দালাল গোলাম আযমের বিচার হবে। ‘একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠন ও ২৬ মার্চের গনআদালতে গোলাম আযমের বিচারের সংবাদ পরদিন দেশের সবক’টি দৈনিকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশিত হয়।

১ ফেব্রুয়ারি ১৯৯২ গণআদালতের সমর্থনে গনস্বাক্ষর কর্মসূচী শুরু করা হয় এবং মাত্র ৫০ দিনের মধ্যেই ঘোষিত ২০ লক্ষাধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ করা যায় যা থেকে খুব ভালভাবেই গণআদালতের প্রতি দেশের সর্বস্তরের মানুষের আস্থা ও সমর্থন অনুমেয়।

১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ২১তম বার্ষিকীতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লক্ষাধিক গণমানুষের উপস্থিতির এক বিশাল জনসমুদ্রে আম্মা জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ফাঁসির রায় ঘোষনা করেন।

১১৯৪ সালের ২৬ জুলাই চট্টগ্রামে গোলাম আযমের সমাবেশ বিরোধী জনতার মিছিলে জামায়াতের সসস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির (পাকিস্তান পিরিয়ডে ‘ইসলামী ছাত্রসংঘ’ নামে পরিচিত ছিল ও একাত্তরে এর একটি অংশ ‘আল বদর’ নামে বুদ্ধিজীবি ও বাঙালি গণহত্যায় অংশগ্রহন করে) ও তৎকালীন “প্রতিক্রিয়াশীল বিএনপি-সরকারের” অনুগত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা গুলি চালায়; এতে কিশোর এহসানুল হক মনি, টিটু সহ চারজন নিহত হয় ও আহত হয় শতাধিক।

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরুঃ – 

২৯ ডিসেম্বর ২০০৮:
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে।

২৯ জানুয়ারি ২০০৯:
জাতীয় সংসদে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের প্রস্তাব উত্থাপিত ও সাংসদের ভোটে পাশ হয়।[৭]

২৫ মার্চ ২০০৯:

পাশকৃত এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকার বিদ্যমান “আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালস অ্যাক্ট-১৯৭৩” ভিত্তিতে  মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত ও বিচারের উদ্যোগ গ্রহণের সিদ্ধান্ত করে।

২১ মে ২০০৯:
এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ কে সময়োপযোগী করার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামতের জন্য আইন কমিশনে প্রেরন করে।[৬ঃ২]

০৯ জুলাই ২০০৯:
আইন কমিশনের সুপারিশ সম্বলিত সংস্কারকৃত ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন, ১৯৭৩’ সংসদে পাশ হয়।

২৫ মার্চ ২০১০:
যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নের পর স্বাধীন ট্রাইব্যুনাল, আইনজীবী প্যানেল ও তদন্ত সংস্থা গঠন করে মানবতাবিরোধী অপরাধের আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম শুরু করা হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে গোলাম আযমের বিচার ও মৃত্যুঃ –

০১ আগষ্ট, ২০১০, গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের স্বার্থে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এ তদন্ত কমিটি প্রত্যক্ষদর্শীর বিবৃতি ও নথিপত্র সংগ্রহ করে তদন্ত কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে চলে।

২০১১ সালের ১২ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয় এবং ট্রাইব্যুনাল ২৬ ডিসেম্বর অভিযোগ আমলে নেয়ার দিন ধার্য করে।
কিন্তু এই অভিযোগপত্র অবিন্যস্ত থাকায় ও বিধিবদ্ধ না হওয়ায় তা আবার প্রসিকিউশনের কাছে ফেরত পাঠায় ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে অভিযোগপত্র ত্রুটিমুক্ত করে ৫ জানুয়ারি, ২০১২ পুনরায় ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়া হয়।

৯ জানুয়ারি, ২০১২ ট্রাইব্যুনাল গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আমলে নেয় এবং ১১ জানুয়ারির মধ্যে গোলাম আযমকে স্বশরীরে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ প্রদান করে।

১১ জানুয়ারি গোলাম আযমকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হলে, তার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে গ্রেফতার করে কারাগারে প্রেরন করার নির্দেশ দেয়া হয়। গোলাম আযমের বয়স ও স্বাস্থ্য জনিত বিষয় বিবেচনা করে ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে তাকে জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) হাসপাতালের প্রিজন সেলে রাখা হয়।[১][৩]

১৩ মে, ২০১২ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ সমুহঃ – [১][৪]

এক. মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের ষড়যন্ত্র সংক্রান্ত ৬টি অভিযোগ। এর মধ্যে অন্যতম – সামরিক আইন প্রশাসক টিক্কা খানের সাথে দুই দফায় সাক্ষাৎ করে ‘শান্তি কমিটি’ গঠনের ষড়যন্ত্র করা এবং রাজাকার বাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করার পরামর্শ প্রদান।

দুই. মানবতাবিরোধী অপরাধের ষড়যন্ত্র অনুযায়ী অপরাধ সংগঠনের পরিকল্পনার ৩টি অভিযোগ। এক্ষত্রে অন্যতম – টিক্কা খানের সঙ্গে বৈঠকে ১৪০ সদস্যের ‘শান্তি কমিটি’ গঠন।

তিন. মানবতাবিরোধী অপরাধ সংগঠনের উস্কানি দেয়ার ২৮ টি অভিযোগ। এর মধ্যে অন্যতম – স্বাধীনতাকামী বাঙ্গালিদের ‘ভারতীয় অনুপ্রবেশকারী’ আখ্যায়িত করে তাদের ধ্বংস করার আহ্বান জানান, বিভিন্ন সভা-সমাবেশে পাক-বাহিনীর সহযোগী সংগঠনগুলোর সদস্যদের দেশপ্রেমিক আখ্যা দিয়ে সাধারন জনগনের উপর হামলার আহ্বান জানান।

চার. মানবতাবিরোধী অপরাধে সহযোগীতা ও সম্পৃক্ততার ২৩টি অভিযোগ। অন্যতম অভিযোগ – প্রাথমিক ভাবে গঠিত শান্তি কমিটির নাম পরিবর্তন করে ‘কেন্দ্রীয় শান্তি কমিটি’ রাখা এবং সেখানে কার্যকরী সদস্য হিসাবে যোগ দেয়া। দেশি-বিদেশি সংবাদ মাধ্যমে স্বাধীনতাকামী জনগনকে ‘দুষ্কৃতকারী’ বলা, এবং তাদের ‘পাকড়াও’ চেষ্টা অব্যাহত রাখার ঘোষন দেয়া। নির্বাচনে বিজয়ীদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সময় হয়নি বলে প্রচারনা চালান।

পাচ. ব্যক্তিগত ভাবে সরাসরি হত্যা ও নির্যাতনের ১টি অভিযোগ।
একাত্তরে মোহাম্মদপুর থানার সাব-ইন্সপেক্টর সিরু মিয়া ও তার ছেলে সহ ছয়জন ভারতে যাওয়ার সময় কসবা চেকপোষ্টের কাছে রাজাকারদের হাতে ধরা পরেন ২৭শে অক্টোবর। তাদের স্থানীয় রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে কয়েকদিন নির্যাতনের পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এখবর পাবার পর সিরু মিয়ার স্ত্রী গোলাম আযমের সাথে যোগাযোগ করেন। গোলাম আযম ব্রাহ্মণবাড়িয়া শান্তি কমিটির নেতা পেয়ারে মিয়ার কাছে একটি চিঠি পাঠান। চিঠিতে সিরু মিয়া ও তার ছেলেক হত্যার নির্দেশ দেয়া ছিল। চিঠি পাবার পর ঈদের দিন রাতে সিরু মিয়া ও তার ছেলে সহ ৩৯ জনকে পৈরতলা ব্রিজের কাছে গুলি করে করা হয়। এদের মধ্যে ৩৮ জন মারা গেলেও একজন প্রাণে বেচে যান।

গোলাম আযমের বিরুদ্ধে আনিত সবকয়টি অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ গোলাম আযমকে বয়স বিবেচনায় আমৃত্যু কারাদন্ডে (৯০ বছর) দন্ডিত করে।

রায় প্রদানের পর ২০১৩ সালের ৫ আগস্ট খালাস চেয়ে আপিল করে গোলাম আযম এবং সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করেন রাষ্ট্রপক্ষ।[৫]

আপিল চলাকালীন ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (BSMMU) হাসপাতালে প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন গোলামা আযম মারা যায়। এতে তার রায়ের বিপরীতে দায়ের করা আপিল অকার্যকর হয়ে যায়।[৫]

পরিশিষ্টঃ –

গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সাথে একাত্ম হয়ে দেশে গণহত্যা, ধর্ষন, লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, জোর পূর্বক ধর্মান্তরিতকরন ইত্যাদি মানবতাবিরোধী অপরাধ চালানোর নিমিত্তে ১৯৭১ সালের ৯ এপ্রিল গঠন করে ১৪০ সদস্য বিশিষ্ট ‘শান্তি কমিটি’, তার নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল জামাতে ইসলামী ও এর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘ (আল বদর) একাত্তরে পাকিস্তান আর্মির সহযোগী হয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটন করে।

একাত্তরে বাঙালি গণহত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী, বাংলাদেশ ও বাঙালির মহাশত্রু, মনুষ্য সমাজের কলঙ্ক,  শান্তি কমিটির প্রতিষ্ঠাতা গোলাম আযমকে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আমৃত্যু কারাদন্ডের রায়  ও শাস্তি প্রদান করে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ন অংশ।

একাত্তরের ত্রিশ লক্ষাধিক শহীদ ও দুই লক্ষাধিক মায়ের রক্তঋন শোধে এটি একটি বড় অর্জন বাঙ্গালী জাতির জন্য। তবে বয়স বিবেচনায় এই নরপিশাচের সর্বোচ্চ শাস্তি না হওয়াটাও বেশ বেদনাদায়ক। কিন্তু তার মৃত্যুর সময়ও তার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল চলছিল। আমরা এটা ভেবে কিছুটা হলেও এই বেদনা লাঘব করতে পারি যে, আপিলের রায়ে হয়ত তার সর্বোচ্চ শাস্তি হলেও হতে পারতো। বাঙ্গালী জাতি এক প্রধান মানবতাবিরোধী অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতো।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর ২৪৩ পৃষ্ঠার পূর্নাঙ্গ রায়

তথ্যসূত্রঃ –

১. আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল

২. BBC

৩. দৈনিক কালের কণ্ঠ

৪. দৈনিক ইত্তেফাক

৫. দৈনিক প্রথম আলো

৬. বিডিনিউজ২৪ [ , ]

৭. The Daily Star

৮. দৈনিক মানবকন্ঠ

৯. গনআদালতের পটভূমি – শাহরিয়ার কবির

১০. জামায়াত ও শিবিরের জন্ম ও উত্থান – মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা : তথ্যসমৃদ্ধ অনুসন্ধান

১১. ‘একাত্তরে আমরা ভুল করিনি’ – গোলাম আযম ও জামাতের রাজনীতি

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button