জয়নুল গল্প
হাশেম খান
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জীবনকালের বিভিন্ন অবস্থানের টুকরো কিছু ঘটনা, তার চিন্তা ও উপলব্দিকে বিবৃত করে গল্পের অবয়বে লেখা কিছু নিবন্ধের সংকলন- এই বই বাংলাদেশ নামক অঞ্চলে আধুনিক শিল্পকলার ইতিহাস শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে দিয়ে শুরু করতে হয়। তার বাষট্টি বছরের জীবনের এই ইতিহাস সৃষ্টিতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে । চড়াই উত্রাই পেরিয়ে তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছতে পেরেছেন । অনেক গুণী ও সংবেদনশীল মানুষের সহযোগিতা যেমন পেয়েছেন- বিচিত্র সব মানুষের মুখোমুখি হয়ে বিব্রতকর অভিজ্ঞতাও অর্জন করেছেন শিল্পকলা আন্দোলন, শিল্পকলা চর্চার প্রতিষ্ঠান নির্মাণ, নিয়মিত শিক্ষকতা, চিত্রশিল্পীদের পেশাভিত্তিক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সহ নিজের শিল্পসৃষ্টিতেও ছিলেন খদ্ধ।
শিল্প ও সাংস্কৃতিক চর্চা সমাজকে কুসংস্কার ও ধর্মানধ্যতা থেকে আলোর পথে নিয়ে আসতে পারে । সমাজে রুচিশীল চিন্তা, সত্য ও সুন্দরের প্রতিষ্ঠায় সবসময় তিনি সচেষ্ট ছিলেন । আজীবন ঐতিহ্য সন্ধানী এই মানুষটি তার সব কাজের মধ্যে নিজকে খাঁটি বাঙালি রূপে পরিচয় দিয়ে আনন্দ পেতেন । তাঁর শিল্পসৃষ্টি ও নানামুখি কর্মের মাধ্যমে মানুষের হৃদয় জয় করেন। অসম্প্রদায়িক ও মানবতাবাদী বৈশিষ্ট্যের কারণে মানুষ তাকে অকৃত্রিম ভালোবাসায় শিল্পাচার্য উপাধিতে সম্মানিত করে। তার শেষ স্বপ্ন ছিল সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে বাংলাদেশের (লোকশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবেন। বিভিন্ন ধর্ম ও সামাজিক অবস্থানের দরিদ্র লোকশিল্পীদের গ্রাম, বাড়িঘর ও পেশাকে নিরাপত্তা দেবেন । রাষ্ট্রীয়ভাবে বিশেষ আইন প্রণয়ন করে এই নিরাপত্তার ব্যবস্থা হবে। জমি আগ্রাসী লোভী মানুষের হাত থেকে তাদের বাঁচাবেন । দেশে-বিদেশে বাংলার লোকশিল্পের গুরুত্ব বাড়াবার জন্যে মানুষকে আগ্রহী করে তোলা হবে। সোনারগাঁয়ের ‘লোকশিল্প জাদুঘরের” সঙ্গে লোকশিল্প ও কারুশিল্পের বিভিন্ন বিষয় সমন্বয়ে একটি আদর্শ লোকশিল্প গ্রাম প্রতিষ্ঠা করবেন। তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন শুরুটা করেছিলেন শেষ করতে পারেননি। দূরারোগ্য ক্যান্সার রোগ তাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে গেল। ‘জয়নুল গল্পের’ সিংহভাগ লেখা নিয়ে ১৯৯২ সালে প্রকাশিত একটি বই । তরুণ ও কিশোর পাঠকদের ‘ঐতিহ্য’ বিষয়ে আগ্রহী করে তোলার উদ্দেশ্যে খ্যাতিমান লেখক মুনতাসীর মামুনের আগ্রহে এবং তারই সম্পাদনায় বইটির প্রকাশ ঘটেছিল। যথেষ্ট পাঠক প্রিয়তা পেয়েছিল বইটি। দীর্ঘদিন পর সেই বইয়ের লেখাগুলোর সঙ্গে আরো ৩টি নতুন নিবন্ধ, অসংখ্যক নতুন ছবি ও তথ্য সংবলিত করে ‘জয়নুল গল্প” প্রকাশ করা হলো । পাঠকের চোখে কোনো ক্রটি ধরা পড়লে এবং নতুন কোনো তথ্য জানা থাকলে লেখককে জানালে তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে পরিমার্জন করে পরবর্তিকালে বইয়ে সংযোজন করা হবে।
– হাশেম খান, ১লা ফেব্রুয়ারি ২০০৯