একাত্তরের বধ্যভূমি
মোঃ জয়নাল আবেদীন
২০১১
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির রাজনৈতিক ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ঘটনা । এ ঘটনার প্রধান নায়ক হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ১৯৪৮ সাল থেকে ধাপেধাপে বাঙালিদের সংগঠিত করে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের ঐক্যবন্ধনে নিয়ে আসেন। পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের ষড়যন্ত্রের ফলে ১৯৭১ সালে তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রকাঠামোয় ক্ষমতার শীর্ষে যেতে পারেননি । তিনি যদি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে পারতেন-তা হলে আমার বিশ্বাস শাসনতান্ত্রিক ভাবেই বাংলাদেশ স্বাধীন হতো । কিন্তু অগণতান্ত্রিক চেতনার ধারক ও বাহক পাকিস্তানি স্বৈরশাসকদের লেলিয়ে দেওয়া সৈন্যদের বাঙালি নিধনের নীলনকসার প্রতিবাদে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জন ছাড়া কোন বিকল্প ছিলনা ।
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চে বঙ্গবন্ধুর আহবানে ও তার নির্দেশিত পথে অগ্রসর হয়ে তারই সুযোগ্য শীষ্য তাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এ এইচ এম কামারুজ্জামানসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দের পরিচালনায় বাঙালি ছাত্র, যুবক, কৃষক, শ্রমিক ও কর্মচারী বিভিন্ন পেশার মানুষ মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে প্রতিষ্ঠা করে পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালির রাজনৈতিক ঠিকানা স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র ‘বাংলাদেশ’। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লক্ষ বাঙালির জীবন ও ২ লাখ মা- বোনের সন্ত্রমের বিনিময়ে বাঙালি পায় বাংলাদেশ। এত ত্যাগের বিনিময়ে বিশ্বের খুব কম জাতিই স্বাধীন হয়েছে। যাদের ত্যাগে এদেশ-তাদের স্মরণ করার জন্যই এ গ্রন্থ সম্পাদনার পরিকল্পনা৷ গত দু বছরে বিজয় ও স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে আমাদের জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহের স্থানীয় সংবাদদাতারা বধ্যভূমি ও গণহত্যার উপর বহু প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। সংবাদপত্র পরের দিনই পাঠকদের নিকট পুরাতন হয়ে যায়।
তাই আমি চিন্তা করি পত্রিকায় প্রকাশিত বধ্যভূমি ও গণহত্যার প্রতিবেদনগুলো সংকলিত করে একটি গ্রন্থ সম্পাদনার । পত্রিকার রিপোর্ট কেটে সংগ্রহ করি। পেশাগত কাজে দেশের বিভিন্ন জেলায় ভ্রমণকালেও সহকর্মীদের সহযোগিতায় কিছু বধ্যভূমি ও গণহত্যার তথ্য সংগ্রহ করি-নিজের ক্যামেরায় বহু ছবি তুলি। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস লিখতে এ সব প্রতিবেদন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী পাকিস্তানী সৈন্যদের বাংলাদেশী দোসরদের অপকর্ম স্মরণ করিয়ে দিতেও এ গ্রন্থ বিশেষ অবদান রাখবে। জাতীয় পত্রিকাসমূহের প্রতিবেদক, লেখক ও আমার সহকর্মী যারা ভ্রমণকালে আমাকে গণহত্যার তথ্য সংগ্রহে নানাভাবে সহায়তা করেছেন, বধ্যভূমির সন্ধান দিয়েছেন, স্পটের কাছে নিয়ে গিয়েছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানাই। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের উপ-প্রধান সেনাপতি, বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) একে খন্দকার (বীরউত্তম) ভূমিকা লিখে দিয়ে গ্রন্থের মান বৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন। তাঁর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।
ভূমিকা সংগ্রহে আন্তরিক সহযোগিতা করার জন্য বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, সংগঠক ও অন্যতম বিজ্ঞানমনস্ক ব্যক্তিত্ব জনাব শাহজাহান মৃধা বেনুকে জানাই ধন্যবাদ । পালক পাবলিশার্সের স্বত্বাধিকারী, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ফোরকান আহমদ এর প্রতিও আমি কৃতজ্ঞ । আগেও তিনি আমার দু’টি গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। গ্রন্থের প্রুফ সতর্কতার সাথে দেখে দেয়ায় বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. ইসরাইল খানকে ধন্যবাদ। বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বইয়ের প্রচ্ছদ একে দিয়ে এবং জনসংযোগ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ এবং আমার দপ্তরের একেএম ফজলে বারী বইয়ের পান্ডলিপি প্রস্তুত করার কাজে নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন। সকলকে ধন্যবাদ জানাই । গ্রন্থটি পাঠকদের মনে দাগ কাটলে আমার পরিশ্রম স্বার্থক হয়েছে মনে করব।
– মোঃ জয়নাল আবেদীন