বই-দলিলপত্র-প্রবন্ধসকল কনটেন্ট
Trending

একাত্তরের বিচ্ছু বশির – রফিকুল হক দাদু ভাই

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

READ 

একাত্তরের বিচ্ছু বশির

রফিকুল হক দাদু ভাই

পঙ্খিরাজ 

আমার কথা একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ যখন জনযুদ্ধে রূপান্তরিত হয়, তখনই অনিবার্য হয়ে ওঠে বাংলার স্বাধীনতা। এ দেশের কৃষক, শ্রমিক, নৌকার মাঝি, জেলে, তাঁত, কামার, কুমার, গৃহবধূ, কিশোর-কিশোরী, এমনকি সামান্য বুঝতে পারে এমন শিশুরা পর্যস্ত উজ্জীবিত হয়েছিল সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অগ্নিঝরা উদাত্ত আহ্বানে ।

প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ার ডাক দিয়ে বজ্রকন্ঠে তিনি আদেশ করেছিলেন, ‘তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা কর!” গুটিকয়েক স্বার্থান্বেষী বিপথগামী কুলাঙ্গার ছাড়া, বঙ্গবন্ধুর সেই অমোঘ নির্দেশনায় কঠিন শিলার মতো ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল গোটা বাঙালি জাতি। তাদেরই একটি অংশ সম্মুখ সমরে অংশ নিতে সীমান্ত পেরিয়ে একত্রিত হয়েছিলেন প্রতিবেশী বন্ধুদেশ ভারতের মাটিতে। সেখানে তারা সংগঠিত হয়ে, প্রশিক্ষণ নিয়ে হয়ে উঠেছিলেন অস্ত্রবিদ্যায় পারদর্শী। আবার কেউ কেউ শব্দসৈনিক, কণ্ঠসৈনিক, ক্রীড়াসৈনিক কিংবা কলমসৈনিকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সামিল হয়েছিলেন দেশমাতৃকার মুক্তির সংগ্রামে।

তারা সবাই বাংলা মায়ের দামাল ছেলে, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান, বীর মুক্তিযোদ্ধা। আর যারা নিরূপায় হয়ে, ভিটেমাটি আগলে, প্রাণ হাতের মুঠোয় নিয়ে পড়ে রইলেন দেশের ভেতরেই, তাদের কষ্ট আর অসহায়ত্বের কথাও অবশ্যই বিবেচনায় রাখতে হবে আমাদের | কায়মনোবাক্যে দেশের স্বাধীনতা জন্যে কাজ করেছেন তারা। লুকিয়ে রেখে, খাদ্য-খোরাক জুগিয়ে এবং সব রকমের সাহায্য সহযোগিতা করে ত্বরান্বিত করেছেন আমাদের কাঙ্খিত বিজয়। অবশ্যই, মুক্তিযোদ্ধা তারাও । মেঘনাপাড়ের যে মাঝি খানসেনাদের তাক করা রাইফেলের নলের মুখে তাদের নদী পার করার সময় অসীম সাহসে মাঝ দরিয়ায় নৌকাটি উল্টে দিয়ে সবকজন শক্রসেনাকে ডুবিয়ে মেরেছিলেন- সশ্রদ্ধ সালাম জানাই সেই নাম না জানা মাঝি ভাইকে । তিনিও তো একজন মুক্তিযোদ্ধা। আমার এ বইয়ের গল্প মুক্তিকামী সেইসব সাধারণ মানুষকে নিয়ে। নছির আলী, ছোট্ট ছেলে বশির তাদেরই প্রতিনিধি । যাদের অনেকেই স্বাধীনতার এতদিন পরেও বাংলাদেশের হাটে-বাটে-বন্দরে আজও অন্যরকম এক যুক্তিযুদ্ধে নিয়োজিত রয়েছেন। সমমর্মিতা জানাই তাদের সবাইকে। পঙ্ধিরাজ-এর স্বত্বাধিকারী আমার স্নেহভাজন প্রকাশক দেওয়ান আজিজের আগ্রহ, তাগাদা এবং নাছোড়বান্দা ভূমিকা ছাড়া আমার এ বইটির জন্ম অসম্ভব ছিল। তার প্রশংসা করার ভাষা আমার জানা নেই। অনেক পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করে বইটির নবতর এ সংস্করণটিও প্রকাশ করা সম্ভব হলো তারই কারণে প্রীতিভাজন অংকনশিল্পী আজিজুর রহমানকেও অনেক অনেক ধন্যবাদ। অতি অল্প সময়ে তিনি সুন্দরভাবে আমার বইটি সুশোভিত করেছেন । আর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার ঘরণী কবি ফাতেমা হককে, যিনি রাত জেগে এ বইটি লেখার বেলায় অনেক সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে যত প্রাণ বলি হয়েছে, চোখের পানিতে তাদের নাম লেখা আছে আমাদের বুকের গভীরে । আর অসমসাহসী যেসব মুক্তিযোদ্ধা, ধারা আজও আছেন আমাদের চারপাশে- তাদের সবার জন্যে আমার শ্রদ্ধা ও সালাম।

– রফিকুল হক দাদু ভাই

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button