বই-দলিলপত্র-প্রবন্ধ
Trending

ফেরারী ডায়েরী – আলাউদ্দিন আল আজাদ

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

ফেরারী ডায়েরী

আলাউদ্দিন আল আজাদ

১৯৭৭

আলাউদ্দিন আল আজাদ বাংলাদেশের খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, গবেষক। তিনি ১৯৫২ এর ভাষা আন্দোলনের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসের দিনলিপি নিয়ে প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও অংশগ্রহণের আলোকে রচনা করেন ‘ফেরারী ডায়েরী।”

.

স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার ? ভয় কি বন্ধু আমরা এখনো চারকোটি পরিবার খাড়া রয়েছি তো যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য পারেনি ভাঙতে ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ।
(জন্ম: ৬ মে ১৯৩২ ইং – মৃত্যু, ৩ জুলাই ২০০৯ ইং)

বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, বহুমাত্রিক লেখক ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ ছিলেন বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির একজন পুরোধা ব্যক্তিত্ব। তিনি ছিলেন একাধারে ভাষাসৈনিক, মুক্তিযোদ্ধা, কবি, কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, সমালোচক, সব্যসাচী লেখক, শিক্ষাবিদ। বাংলাদেশের গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বসাহিত্যে নিজের দীপ্তিমান প্রতিভার দ্যুতি সফল ভাবে ছড়িয়ে দিয়ে ছিলেন। সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি শাখায় ছিল তার সার্থক বিচরণ। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, নাটক, গবেষণা, অনুবাদ সব মিলিয়ে তার প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় দুই শতাধিক। আলাউদ্দিন আল আজাদের সাহিত্যকর্ম পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত ও প্রশংসিত হয়েছে। কর্ম জীবনের পুরোটা সময় সাহিত্যের মেধাবী ও দক্ষ অধ্যাপক এবং সংস্কৃতির সেবক হিসেবেই কেটেছে। এই মহান ব্যক্তিত্ব স্বকীয় মহিমায় উদ্ভাসিত। প্রগতিশীল রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনা ও সংগ্রামী কর্ম তৎপরতার কারণে একাধিকবার কারাবরণ করেছেন। আমাদের মহান ভাষা-আন্দোলনে তিনি ছিলেন সক্রিয় কর্মী। ভাষা আন্দোলনে একুশে ফেব্রূয়ারি ছাত্র হত্যার পর তারই উদ্যোগে প্রকাশিত হয় একুশের প্রথম বুলেটিন। প্রথম শহীদ মিনার নিয়ে তিনিই প্রথম রচনা করেন কালজয়ী ঐতিহাসিক কবিতা ‘স্মৃতিস্তম্ভ’। মুক্তিযুদ্ধকালীন দিনলিপি নিয়ে রচনা করেছেন এক অনন্য দলিল ‘ফেরারি ডায়েরি’। মোটকথা আলাউদ্দিন আল আজাদের জীবন ও সৃষ্টি আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তিনি বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র।

তিনি ১৯৩২ সালের ৬ মে নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে একটি মধ্যবিত্ত বনেদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। উনার পিতা গাজী আব্দুস সোবহান এবং মাতা মোসাম্মাৎ আমেনা খাতুন। মাত্র দেড় বছর বয়সে মায়ের চিরবিদায় এবং দশ বছর বয়সে বাবা ইন্তেকাল করেন। তখন থেকেই উনার জীবন সংগ্রাম শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালে প্রবেশিকা এবং ১৯৪৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৩ সালে অনার্স এবং ১৯৫৪ সালে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর তিনি সরকারি কলেজের অধ্যাপনা পেশায় যুক্ত হন। তিনি নারায়ণগঞ্জের তোলারাম কলেজ (১৯৫৫), ঢাকা জগন্নাথ কলেজ (১৯৫৬-৬১), সিলেট এমসি কলেজ (১৯৬২-৬৮) এবং চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ (১৯৬৪-৬৭)-এ অধ্যাপনা করেন। তিনি ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন এক বছর (১৯৭৪-৭৫) এবং পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন। পেশাগত জীবনে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাসে সংস্কৃতি উপদেষ্টা, শিক্ষা সচিব, সংস্কৃতিবিষয়ক বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭০ সালে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি ঈশ্বরগুপ্তের জীবন ও কবিতা বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশের সাহিত্যের ইতিকথা এবং আবহমান বাংলা সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার প্রতি তার ছিল বিশেষ ঝোঁক। তাই দেখা যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে আশির দশকের দিকে ‘হিরামন’ নামে একটি ধারাবাহিক অনুষ্ঠান করতেন। সেখানে বাংলাদেশের লোকজ-দেশজ, বিশেষ করে ময়মনসিংহ গীতিকার কাহিনী অবলম্বনে নাট্যরূপ দেওয়া হতো। আলাউদ্দিন আল আজাদ সঞ্চালকের ভূমিকা পালন করতেন। তার উপস্থাপনা ছিল প্রাণবন্ত। তার শব্দচয়ন ও বাকভঙ্গি বিশেষ আকর্ষণীয় ছিল। ঠিক সেভাবেই তার স্বাতন্ত্র্য এবং ঐশ্বর্য বাংলা কবিতাভুবনে নিঃসন্দেহে এক অনন্য সংযোজন। স্বদেশপ্রেম-সমাজসচেতনতা এবং সংগ্রামী চেতনা তাঁর কাব্যচর্চার প্রধান কেন্দ্রভূমি হয়েছিল। একজন শক্তিশালী কথা-সাহিত্যিক তিনি, কবি হিসেবে যেমন আলোকোজ্জ্বল নক্ষত্র, আবার উপন্যাসে-ছোটগল্পে বা প্রবন্ধেও জুড়ি মেলা ভার। পঞ্চাশের দশকের গোড়ার দিকেই তাঁর স্ফুরণ চোখে পড়ে। গল্পে যেমন নিজেকে উজাড় করেছেন, তেমনি সাহিত্যের সকল শাখায় পদচারণ চোখে পড়ার মতো। তার সমসাময়িক কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যে তিনি একমাত্র ব্যতিক্রম, যে সব শাখায় বিচরণ করে সাফল্যের সঙ্গে নিজেকে তুলে ধরেছেন। প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক আবদুল মান্নান সৈয়দ বলেছেন, ‘আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রথম গল্পকার, যিনি অতি অল্প বয়সে খ্যাতি অর্জন করেন’।

সমাজতন্ত্র ও শ্রেণী চেতনা তার গল্পের প্রধান বিষয়। গ্রামীণ জীবন, সমাজ, সেই সঙ্গে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের পরিচয় তার সাহিত্যে পাওয়া যায়। বিশেষ করে ধর্মান্ধতা কতোটা শেকড় বিস্তার করে আমাদের সমাজ জীবনকে অতিষ্ঠ করেছে এবং সেখান থেকে বের হওয়ার রাস্তা কতোটা সংকীর্ণ, সেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন পরিবেশের গল্প তুলে ধরেছেন। এর ভয়াবহতা সম্পর্কে যেমন জানিয়েছেন, পাশাপাশি ধনী-গরিবের আকাশ-পাতাল বৈষম্যের কথা উপস্থাপন করেছেন। মার্কসীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ আজাদ বলেছিলেন, ‘সেখান থেকে আর কোনো নিস্তার নেই, যদি না সমাজতন্ত্র আসে। করুণা নয়, ভিক্ষা নয়, ফিতরা-জাকাত নয়, চাই ফসলের ন্যায্য অধিকার, সম্পদের সুষম বণ্টন, তখনই হবে বন্ধুত্ব-ভ্রাতৃত্ব, সমাজে ফিরে আসবে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি। কেউ কারো চেয়ে ছোট নয়, বড় নয়, মানুষ হবে মানুষের মতো। মানুষ পাবে বাঁচার অধিকার, প্রাণ খুলে নিঃশ্বাস নেওয়ার স্বাধীনতা। বদলে যাওয়া সেই সমাজে সব কুসংস্কার-ধর্মান্ধতা বিলীন হবে, মানুষ বাঁচবে মানুষের ভালোবাসায়, ধনী-গরিবের ভেদাভেদ ভুলে গাইবে সাম্যের গান। তাই তো আমি সমাজতন্ত্র চাই। উনাকে নিম্নবর্গের মানুষের মুখপত্র হিসেবে অভিহিত করা হয়। তিনি শৈশব জীবন থেকেই দারিদ্র্যতার কষাঘাতে জর্জরিত ছিলেন। নিম্নবর্গের মানুষের জীবন খুব থেকে দেখেছেন এবং উপলব্ধি করেছেন। তিনি তার উপন্যাস, গল্পে ও প্রবন্ধে নিম্নবর্গের মানুষের কথাই উল্লেখ করেছেন। তিনি সাবলিল ভাবে বিজ্ঞানসম্মত ও আধুনিক চিন্তা ভাবনা হতে সমাজের কুসংস্কার ও অপসংস্কৃতি দূর করে লেখনীর মাধ্যমে নিরন্তর লড়াই করে গেছেন। যার প্রভাব এখনো বিদ্যমান এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।

আলাউদ্দিন আল আজাদ ছিলেন রাজনীতি সচেতন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক। তিনি প্রভাবিত হয়েছিলেন বাঙালি জাতীয়তাবাদ, প্রগতিশীল সংস্কৃতি ও চিন্তার প্রবাহ দ্বারা। ভাষা আন্দোলনে কবি আলাউদ্দিন আল আজাদ বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছেন এবং শহীদ মিনার নিয়ে তিনিই প্রথম কবিতা লিখেছেন। ফেব্রূয়ারি কেন্দ্রিক কবিতা ‘স্মৃতির মিনার’ বাংলা সাহিত্যের এক অমূল্য সম্পদ। ভাষা আন্দোলন কেন্দ্রিক জাগরণের ঢেউ আজাদের চেতনা মন্দির কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ১৯৫৩ সালে কবি হাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদিত ‘একুশে ফেব্রূয়ারি’ সংকলনে তার কালজয়ী কবিতা স্থান পায়, নাম ‘স্মৃতিস্তম্ভ’। এই কবিতাটি অবিস্মরণীয় হয়ে আছে বাঙালি জাতির মনে ও মননে। কবিতাটির রচনাকাল ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সাল। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একজন বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ ও দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধাহত মুক্তিযুদ্ধের করুণ জীবন নিয়ে তিনি বেশ কিছু গল্প ও প্রবন্ধ লিখে সাড়া ফেলে দিয়ে ছিলেন। আজ মুক্তিযোদ্ধারা যে পরিমাণে সম্মান ও সুযোগ- সুবিধা পাচ্ছে, তার পেছনে আলাউদ্দিন আল আজাদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে তিনি ছিলেন স্বোচ্ছার। নিজ অধিকার আদায়ে সাধারণ মানুষদের উদ্বুদ্ধ করে গেছেন। অপশক্তির করাল গ্রাসে বাঙালি সংস্কৃতির ঐতিহ্য রক্ষায় তিনি ছিলেন একজন একনিষ্ঠ কর্মী। উনার ক্ষুরধার লেখনী ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য বিভিন্ন সময় অপশক্তির সমালোচনা ও হুমকির মুখে পড়েও পিছিয়ে আসেননি। তিনি তার লক্ষ্যে ছিলেন অবিচল।

আলাউদ্দিন আল আজাদের কবিতার এক বিরাট পরিসর সংগ্রামী চেতনাসমৃদ্ধ এবং বোধজাগানিয়া উপলব্ধিতে সমুজ্জ্বল। তবে তার কাব্য সম্ভারের অনেকাংশেই প্রেম ও প্রকৃতি নির্ভর, ব্যক্তিগত ভাবানুভূতি, আবেগ-আর্তি এবং স্বপ্ন-কল্পনা-আশ্রয়ী, নারী প্রেম এবং ব্যাপক অর্থে মানবপ্রেম উপজীব্য হয়েছে। তার বহু খন্ড কবিতা, বিশেষত সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা প্রেম, প্রকৃতি, রোমান্টিক মানসপ্রবণতা এবং স্বপ্ন ও সৌন্দর্যবোধকে কেন্দ্র করে রূপ নিয়েছে। নৈরাশ্যবাদিতা আলাউদ্দিন আল আজাদ প্রচন্ড রকম অপছন্দ করতেন। তিনি ছিলেন আশা জাগানিয়া স্বপ্নবাজ কবি। তিনি বাসনার হাসিকে দূর্বাদলের শিশিরে প্রবাহিত করার কবি। চৈতালি হাওয়ায় আশার পাল ওড়ানোর কথাকার। সৃজনশীল ভাবনার মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়ে যাওয়া ফিনিক্স পাখি। তার সৃজন কৌশল সম্পর্কে তিনি নিজেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘সৃজনকৌশল মূলত এক প্রকার অর্জিত বিধিমালা। সৌন্দর্যবিজ্ঞান, যা লেখকসত্তার সংবেদনশীলতার মধ্যে নিজস্ব আকৃতি-সন্ধানী। নিজের ক্ষেত্রে আমি দেখেছি, আঙ্গিক বৈচিত্র্য আমার ইচ্ছাকৃত নির্বাচন নয়; আমার একেক প্রকার মানসিক অভিজ্ঞতা নিজ নিজ প্রকরণ যেন নির্ণয় করে নেয়। এটি অভিজ্ঞতার সক্রিয়তারই একেকটি রূপের রূপায়ণ। যখন কবিতা লিখি, কবিতার স্তবকটা, কিংবা, এমনকি একটি চরণ মনে না জাগলে আমি কবিতা লিখতে পারি না। চরণটা মনে জাগলে সে যেন নিজের নিয়মেই চলতে থাকে, স্বয়ংক্রিয়ভাবে বর্ণমালার অবয়ব লাভ করে’।

চিন্তাশীল মনীষীদের দৃষ্টিতে আলাউদ্দিন আল আজাদ ‘পূর্ব বাংলার সাহিত্যের ভবিষ্যত স্বর্ণগর্ভা’, ‘আমাদের কালের বিরল এক প্রতিভাবান সব্যসাচী সাহিত্য গ্রষ্টা’, ‘পঞ্চাশের দশকের সাহিত্যের বাতিঘর’, ‘বাংলা সাহিত্যে বহুমাত্রিক শব্দশিল্পী ও সাহিত্যচার্য’, ‘বাংলা সাহিত্যের বিশাল মহীরূহ’, ‘আধুনিক বাংলা কবিতার ঐতিহ্যানুরাগী’, ‘এক বিরল প্রজ সাব্যসাচী সাহিত্য গ্রষ্টা’, ‘শিল্পের হিরন্ময় দ্যুতি’ সহ আরো নানা অভিধায় অভিষিক্ত। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, বদ্ধুদেব বসু ও শরৎচন্দ্রের মতো আলাউদ্দিন আল আজাদকেও কোনো একটি বিশেষ অভিধায় অভিষিক্ত করা সম্ভব নয়। ড. আনিসুজ্জামান যথার্থই বলেছেন, ‘একটি অভিধায় যে তাকে আখ্যা দেওয়া চলে না, সে তারই গৌরব’। উনার রচিত দুই শতাধিক গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য, গল্প- জেগে আছি(১৯৫০), ধানকন্যা (১৯৫১), জীবনজমিন (১৯৮৮) প্রভৃতি। উপন্যাস- তেইশ নম্বর তৈলচিত্র (১৯৬০), কর্ণফুলী (১৯৬২), ক্ষুধা ও আশা (১৯৬৪), জ্যোৎস্নার অজানা জীবন (১৯৮৬), পুরানো পল্টন(১৯৯২), কায়াহীন-ছায়াহীন (১৯৯৯) প্রভৃতি। কাব্যগ্রন্থ – মানচিত্র (১৯৬১), লেলিহান পাÐুলিপি(১৯৭৫), সূর্য-জ্বালার সোপান (১৯৬৫), নিখোঁজ সনেটগুচ্ছ (১৯৮৩), সাজঘর (১৯৯০) প্রভৃতি হচ্ছে শ্রেষ্ঠ সাহিত্যসম্ভার। উনার বেশ কিছু গ্রন্থ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। তিনি বিশ্বসাহিত্যে নিজের নামটি উজ্জ্বল করে গেছেন। কাজের মূল্যায়নে বিভিন্ন পদক পুরষ্কারও পেয়েছেন। বাংলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৬৪, ইউনেস্কো পুরস্কার ১৯৬৫, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ১৯৭৭, আবুল কালাম শামসুদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৩, আবুল মনসুর আহমেদ সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৪, লেখিকা সংঘ পুরস্কার ১৯৮৫, রংধনু পুরস্কার ১৯৮৫, অলক্তা সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৬, একুশে পদক ১৯৮৬, শেরে বাংলা সাহিত্য পুরস্কার ১৯৮৭, নাট্যসভা ব্যক্তিত্য পুরস্কার ১৯৮৯, কথক একাডেমী পুরস্কার ১৯৮৯ ছাড়াও তিনি দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ স্বর্ণ পদক ১৯৯৪ লাভ করেন।

বাংলাদেশ তথা বিশ্বসাহিত্যের আকাশ আলোকিত করে ২০০৯ সালের ৩ জুলাই, শুক্রবার রাতে ঢাকার উত্তরায় নিজ বাসভবন রত্মদ্বীপে ৭৭ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত কারণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ। তার সৃজনশীল সৃষ্টিকর্মে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে তিনি চির স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

(ড. আলাউদ্দিন আল আজাদ : বাংলা সাহিত্যে বহুমাত্রিক শব্দশিল্পী ও সাহিত্যাচার্য – সৈয়দ আসাদুজ্জামান সুহান – শুক্রবার , ৫ জুলাই, ২০১৯ – দৈনিক পূর্বদেশ)

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button