বাংলাদেশ – বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর
মেজর নাসির উদ্দিন
২০১৮
রাজনীতি যারা করেন তারাই রাজনীতিক এবং দেশ ও দেশবাসীকে সঠিক পথে পরিচালনার রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব তাদের হাতেই থাকার কথা। বিশেষত গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে এমন একটি ধারণাকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হলেও তৃতীয় বিশ্বের বহু দেশ বিভিন্ন কারণে এবং বিভিন্ন সময়ে তা অনুসরণ করে চলেনি। ওই দেশগুলােয় কারণ ও সময়ের যােগসূত্র ঘটিয়ে সমরনীতিকরাও আবির্ভূত হয়েছেন। রাজনীতিতে, দেশ ও দেশবাসীকে পরিচালনার জন্যে কর্তৃত্ব নিয়েছেন রাষ্ট্রক্ষমতার। কখনাে রাজনৈতিক দীনতা কিংবা দেশ ও দেশবাসীকে পরিচালনায় রাজনীতিকদের ব্যর্থতা রাজনীতিতে সমরনীতিকদের আগমনের পথ মসৃণ করে দিয়েছে। আবার কখনাে অনুকূল সময়ের প্রবাহে বিভিন্ন দেশে রাষ্ট্রক্ষমতায় জেঁকে বসেছে সেনানিবাসের অযাচিত উচ্চাভিলাষ। দারিদ্র্যপীড়িত এশীয় অঞ্চলে এই দুই প্রক্রিয়াতেই রাজনীতিতে সমরনীতি কিংবা গণতন্ত্রে সমরতন্ত্র একাকার হয়েছে বহুবার। এই অঞ্চলেরই দক্ষিণ বলয়ের একটি দেশ বাংলাদেশেরও তার স্বাধীনতা লাভের মাত্র তিন দশকের সীমিত সময়ে রাজনৈতিক টানাপােড়েনের সরুপথে একাধিকবার সশস্ত্র বাহিনীর অধিষ্ঠান ঘটেছে রাজনীতিতে এবং এই ধারাপ্রবাহের একটি বিশাল অংশ তার শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে রাজনীতিতে। সশস্ত্র বাহিনীর এই রাজনৈতিক শিবির দখল এবং গণতান্ত্রিক রাজনীতির মােড়কে তাদের পােশাক বদল দেশ ও দেশবাসীর জন্যে কতােটা কল্যাণকর হয়েছে, সে বিতর্কে না গিয়েও আজ এটা প্রায় নিশ্চিত করে বলা যায় যে রাজনীতিতে তাদের দৃঢ় অবস্থান সব বুঝেশুনেই দেশবাসী এতদিনে অনেকটা আত্মন্থ করে নিয়েছে। খুব সম্ভব তাদের বিবেচনায় রাজনীতিতে কিংবা রাষ্ট্রক্ষমতায় সামরিক বাহিনীর বেসামরিক উপস্থিতি মােটেও অপাঙক্তেয় নয়, অনাহূত তাে নয়ই। কিভাবে এটা সম্ভব হলাে এবং কেনই বা হলাে সে আত্মজিজ্ঞাসামূলক চিন্তা থেকেই গ্রন্থকার মেজর নাসির উদ্দিন তার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, সম্পৃক্ততা এবং পরােক্ষ অন্বেষণের মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথযাত্রায় সশস্ত্র বাহিনীর উত্থানের ঘটনাপ্রবাহ পক্ষপাতহীন বিবেচনায় বিবৃত করার চেষ্টা করেছেন। তার এই প্রয়াসেরই সারসংকলন ‘বাংলাদেশ: বাহাত্তর থেকে পঁচাত্তর’।