মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতীয় জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।
শুধু তা-ই নয়, মুক্তিযুদ্ধ মানুষের ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কারন – এই যুদ্ধ ছিল রাষ্ট্রীয় ও জাতিগত শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই।
বাঙালির এই সংগ্রাম ছিল গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সম্পদের সুষম বন্টন ও জাতিগত স্বাধীনতার জন্য।
উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দী জুড়ে রাষ্ট্রীয় ও জাতিগত শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার যে চেতনা মানুষের মধ্যে বিকশিত হয়, তারই ধারাবাহিকতায় ভারতীয় উপমহাদেশের পূর্ব বঙ্গের মানুষের স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত ধাপ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ।
পাকিস্তানি শোষকদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষের অধিক বাঙালি শহিদ হয়, ০৫ লক্ষের অধিক নারী নির্যাতিত হয়, এক কোটির অধিক বাঙালি ভারতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয়, বাংলাদেশ অবকাঠামো দিক হতে একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়।
জেনোসাইডের মধ্য দিয়ে জন্ম হয় বাঙালির একমাত্র রাষ্ট্র বাংলাদেশ।
গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, সম্পদের সুষম বন্টন ও জাতিগত স্বাধীনতা চর্চার মূলনীতিকে ভিত্তি করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের মধ্য দিয়ে অর্জিত বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়।
কিন্তু সাড়ে তিন বছরের মাথায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধ শক্তিরা বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও স্বাধীন বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে।
শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনার উল্টো দিকে বাংলাদেশের হাঁটা।
গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতিগত স্বাধীনতা, সম্পদের সুষম বন্টনের আদর্শকে আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিয়ে বিএনপি-জামাত-সামরিক শাসক, ধর্মীয় ও সুবিধাবাদী শ্রেণীরা বাংলাদেশকে অবলিভিয়নের পথে নিয়ে যায়।
যার ফলস্বরূপ আমরা দেখতে পাই – বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও মানুষের চরম নৈতিক অবক্ষয়, সামাজিক-আর্থিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে বাঙালির চরম বিপর্যয়।
বাঙালিকে এই বিপর্যস্ত অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে হলে – নিজের ইতিহাসকে জানতে হবে, নিজেকে জানতে হবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা করতে হবে।
এছাড়া কোন মুক্তি নেই আমাদের, মানব সভ্যতার ইতিহাস ও এগিয়ে যাওয়া সমাজগুলোর শিক্ষা এটিই।
সভ্যতা চর্চার জন্য পড়ার চেয়ে আর ভালো কোন মাধ্যম নেই।
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বই-দলিলপত্র পাঠ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উসকে দেবে – যা আমাদের গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষতা-সম্পদের সুষম বন্টন ও জাতিগত স্বাধীনতা চর্চার বোধকে জাগ্রত করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে; আগামী দিনগুলোতে বাঙালির এগিয়ে যাবার ক্ষেত্রে নিঃসন্দেহে তা অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে।
মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তির তাঁবেদারদের প্রায় তিন দশকের শাসনামল এবং বাংলাদেশে আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত আদর্শধারীদের পুর্নবাসিত হবার সুযোগের ফলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের যে ভয়াবহ বিকৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চর্চায় যে মারাত্মক অবক্ষয় হয়েছে, তা প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠ ও চেতনা চর্চা আবশ্যিক।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা বাংলাদেশে চলমান দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অবলম্বন।
বাঙালি বই পড়বে, মুক্তিযুদ্ধকে জানবে, নিজেকে আলোকিত করবে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চর্চা করবে – এটুকুই শুধু আশা।
জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু…