মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ শিরায় শিরায় আগুন
হাফিজুর রহমান
২০০৬
কিশোরপুরের দুরন্ত এ-কিশোর বয়সে খুব ছোটো হওয়া সত্বেও দেশ স্বাধীন না-হওয়া পর্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে পালন করেন এ গুরু দায়িত্ব। ইতিহাস তার সাক্ষী। সেই হাফিজ একদিন চলে আসে আমার বর্তমান কর্মস্থল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয়, বোর্ডবাজার, গাজীপুর। সরাসরি বলে, “ভাই, বই লিখবো একখান, মুক্তিযুদ্ধের। ছেপে দেবেন”। পরিস্থিতি সামাল দিতে বললাম “চা পিয়ে নিই, পরে দেখা যাবে”। সরাসরি প্রতিক্রিয়া তার। “ছেপে দিলে লিখবো, নইলে লিখবোই না”। আশ্বস্ত করলাম তাকে। ভবিতব্য এমনই রুঢ়, সেই হাফিজ চলে গেলেন আমাকে রেখে। তার “শিরায় শিরায় আগুন”আমার হাতে। সুলিখিত এ-বই পড়ার আগে বুঝিনি, কেবল মুক্তিযুদ্ধে নয়, গেরিলা পরিচালনায় নয়, লেখায়ও দারুণ এই কমান্ডার। না পড়লে আপনিও বুঝবেন না, হাফিজ কী লিখেছে। যদি নিয়মিত লিখতো, নিশ্চয়ই বাজিমাৎ করতো লেখালেখিতে।
মো. হাফিজুর রহমান হাফিজ ১৯৫৬ সালের অগ্নিঝরা মার্চের ৪ তারিখ জন্মগ্রহণ করেন এক মধ্যবিত্ত পরিবারে। গ্রাম : কিশোরপুর, ইউনিয়ন : পাকুড়িয়া, থানা : চারঘাট (বর্তমান বাঘা), জেলা : রাজশাহী। আট ভাইবোনের ৬ষ্ঠ হাফিজ ছেলেবেলা থেকেই দুরন্ত-দুর্বার শৈশবকালে শীতের আগুন পোহানোর সময়ে পরনের কাপড়ে আগুন লেগে তার হলকায় বুক ও মুখের কিয়দংশ ঝলসে যায়। লেখাপড়ায় আগাগোড়া তেজস্বী হাফিজের উচ্চশিক্ষা হয়ে ওঠেনি। প্রাথমিক শিক্ষা যশোরে, বড় ভাইয়ের বাসায় থেকে। নিজ এলাকা আড়ানিতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণী, আড়ানি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি, এবং ঢাকা থেকে এইচএসসি শেষ করে মিশে যায় জীবন সংগ্রামে। ডিগ্রি বলতে এই শেষ। তবে খুবই বিদ্বান ছিলো। মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ৯ম শ্রেণীতে পড়াকালীন। এর পরের ঘটনা এ গ্রন্থ।
– এম. সা’দাত আলী