মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা ও প্রকাশনা কেন্দ্র
Trending

বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভারত

বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

বিংশ শতাব্দীতে ঔপনিবেশিকতা থেকে মুক্তি ও স্বাধীকারের যে জোয়ার সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পরেছিল, তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ স্ফুলিঙ্গ হলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। শীতল যুদ্ধের বৈশ্বিক চাপ, ভয়াবহতম গণহত্যা, কোটি মানুষের শরণার্থীতে পরিণত হওয়া – এসব বিষয়গুলো বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে সে সময় স্পটলাইটে নিয়ে এসেছিল।

বাংলাদেশ তার রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বড় বন্ধু হিসেবে পেয়েছিল ভারতকে – এক কোটি বাঙালি শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়া, বাংলাদেশ প্রথম সরকারকে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ভারতের মাটি ব্যবহার করতে দেয়া, বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীকে সংগঠিত করতে সহযোগিতা করা, পাকিস্তান অধিকৃত বাংলাদেশকে মুক্ত করতে ভারতের অভ্যন্তর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযান পরিচালনা করতে দেয়া, ডিসেম্বরে মুক্তিবাহিনীর সাথে যৌথভাবে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর বাংলাদেশ মুক্ত করার অভিযানে অংশ নেয়া সহ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ নানাভাবে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ভারত বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়িয়েছিল। এমনকি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতি এসেছিল ভারত থেকেই।

আজকের এই প্রবন্ধের বিষয়বস্তু হলো – বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত, এই বিষয়ের সংবাদভিত্তিক ডকুমেন্টারি এভিডেন্স তুলে ধরা। সংবাদমাধ্যমের উপর জোর দেয়ার কারন, কোন একটি ঐতিহাসিক ঘটনা বুঝতে সে সময়ের সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বা প্রচারিত তথ্যের গুরুত্ব অপরিসীম। সংবাদপত্র হলো কালের সাক্ষী।

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের প্রথম স্বীকৃতিঃ

ভারত প্রথম দেশ হিসেবে ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে ভুটান বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।

যেভাবে ভারত ও ভুটানের স্বীকৃতি এলোঃ

১৯৭১ সালের ০৬ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায় ভারতীয় সংসদের যুক্ত অধিবেশনে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের কথা ঘোষণা করেন।

১৯৭১ সালের ০৭ ডিসেম্বর ভুটানের রাজা জিগমে দর্জি ভারতের কোলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ প্রথম সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের কথা জানান।

ভারতের পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বীকৃতিঃ

০৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের স্বীকৃতি দান বিষয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রকাশিত ‘দৈনিক যুগান্তর’ পত্রিকার ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় লিখেছেঃ

“৬ই ডিসেম্বর-ভারত সরকার আজ গণ-প্রজাতন্ত্রী বাঙলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দিয়েছেন। এই স্বীকৃতির ফলে এই উপমহাদেশে একটি স্বাধীন সার্বভৌম গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্রের অভ্যূদয় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘােষিত হলো।

প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী আজ সকালে সংসদের যুক্ত অধিবেশনে বাঙলাদেশকে স্বীকৃতিদানের গুরুত্বপূর্ণ ঘােষণাটি করেন এবং উভয় সভার সদস্যগণই দাঁড়িয়ে এই ঘােষণাকে স্বাগত জানান। সেই সঙ্গে সংসদ কক্ষে প্রবল হর্ষধ্বনি উত্থিত হয় এবং সদস্যবর্গ উৎসাহ-আবেগে মিলিত ধ্বনি তুলেন– ‘জয় বাংলা’, ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙলাদেশের নতুন সরকার ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ নামে অভিহিত হবে। এই সভা নিশ্চয়ই চান যে, আমি বাঙলাদেশের অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও তাঁদের অন্যান্য সহকর্মীদের কাছে আমাদের ঐকান্তিক সম্বর্ধনা ও আন্তরিক অভিনন্দন পৌঁছে দেই।”

০৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে দেয়া ভুটানের স্বীকৃতি বিষয়ে “দৈনিক যুগান্তর” পত্রিকা পরদিন (০৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১) জানাচ্ছেঃ

“ভুটান বাঙলাদেশকে স্বীকৃতি দিল

নয়াদিল্লী, ৭ ই ডিসেম্বর (পিটিআই) –  ভুটান বাংলাদেশ সরকাকে স্বীকৃতি জানিয়েছে। এক সরকারী মুখপাত্র জানান যে, ভুটানের রাজা বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়ে ভুটানের স্বীকৃতির কথা জানিয়েছেন।

ভুটান দ্বিতীয় রাষ্ট্র যে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি জানাল।

ভুটানের রাজা জিগমি দোরচি ওয়াংচুক বাংলাদেশের অস্থায়ী প্রেসিডেন্ট নজরুল ইসলামকে প্রেরিত বার্তায় বলেনঃ

আমি আমার সরকার ও আমার পক্ষ থেকে আপনাকে ও বাংলাদেশ সরকারকে আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি যে, বাংলাদেশকে আমরা স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্ররুপে স্বীকৃতি জানানাের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

আমরা বিশ্বাস করি যে, বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জনগণের ঐতিহাসিক সংগ্রাম অনতিবিলম্বে সফল হবে।

আমার জনগণ ও আমি আপনাদের নেতা শেখ মুজিবর রহমানের নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছি এবং আশা করছি অবিলম্বে ভগবানের আশীর্বাদে তিনি মুক্তিলাভ করে আপনাদের সেবায় এবং রাষ্ট্রীয় পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়ােগ করবেন।”

পাকিস্তান অধিকৃত বাংলাদেশের পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বীকৃতিঃ

পাকিস্তান অধিকৃত বাংলাদেশে প্রকাশিত দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকা ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় “পাক-ভারত কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন” শিরোনামে লিখেছেঃ

“ইসলামাবাদ, ৬ই ডিসেম্বর (এপিপি)- আজ পাকিস্তান সরকার ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করিয়াছেন। আজ অপরাহ্নে প্রকাশিত এক সরকারী হান্ডআউটে বলা হয় যে, ভারত সরকার তথাকথিত বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দান করায় সম্পর্ক ছিন্ন করা হইয়াছে।”

অথার্ৎ, ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার কারনে পাকিস্তান ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।

একই বিষয়ে পরদিন (০৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১) দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত হয় আর দুটো খবরঃ

১. “বাংলা দেশকে স্বীকৃতি দান – এই প্রথম পাক-ভারত সম্পর্ক ছিন্নঃ (ইত্তেফাকের করাচী অফিস হইতে) ৬ই ডিসেম্বর-

ভারত আজ ‘বাংলাদেশকে সরকার’কে স্বীকৃতি দিয়াছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মিসেস ইন্দিরা গান্ধী আজ সকালে পার্লামেন্টে বাংলাদেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের কথা ঘােষণা করেন।  অল ইন্ডিয়া রেডিও আজ উক্ত ঘােষণার কথা প্রচার করে।

এই স্বীকৃতি ঘােষণার প্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারতের সহিত কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করিয়াছে এবং এক চুক্তিতে পাকিস্তান ভারতে তাহার স্বার্থের প্রতি লক্ষ্য রাখার জন্য সুইজারল্যান্ড সরকারকে অনুরােধ জানাইয়াছে।

উল্লেখ্য যে, ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতা লাভের পর হইতে এ পর্যন্ত পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে আর কখনও কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় নাই। এমনকি ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময় ও দুইটি দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হয় নাই।”

২. “বাংলাদেশের প্রতি ভারতীয় স্বীকৃতিতে চীনের নিন্দা – (হংকং, ৭ই ডিসেম্বর; এপিপি, রয়টার্স, পিপিআই, এএফপি)

চীন গতকাল পাকিস্তানী বিচ্ছিন্নতাবাদী  “বাংলা দেশকে” স্বীকৃতিদানের কঠোর নিন্দা করিয়া ইহাকে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের একটি উদাহরন বলিয়া অভিহিত করে।

পিকিং বেতার “বাংলা দেশের” স্বীকৃতির প্রশ্নে বলেন, “ইহা হইতেছে ভারতীয় সম্প্রসারণবাদ এবং পূর্বপাকিস্তানকে দখল করার কুৎসিত চক্রান্তেরই পরিষ্কার বহিঃপ্রকাশ।”

বেতার উল্লেখ করেন, গত ৬ই ডিসেম্বর ভারতীয় পদাতিক বাহিনী এবং ট্যাংকবহর পূর্ব পাকিস্তানের গভীর অভ্যন্তরে যখন আক্রমণ চালাইতেছিল তখনই ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী স্বীকৃতির কথা ঘোষনা করেন।”

০৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে দেয়া ভুটানের স্বীকৃতি বিষয়ে “দৈনিক ইত্তেফাক” পত্রিকা পরদিন (০৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১) জানাচ্ছেঃ

“ভুটান কর্তৃক ‘বাংলা দেশ’কে স্বীকৃতি দান। 

নয়াদিল্লী, ৭ই ডিসেম্বর (এ, এফ, পি)-

আজ ভুটান ‘বাংলা দেশ’কে রাষ্ট্র হিসাবে স্বীকৃতি দান করিয়াছে।

ভারত কর্তৃক বাংলা দেশ সরকারকে স্বীকৃতি দানের পর হিমালয়ের এই রাষ্ট্র ভুটান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দান করিল।”

আন্তর্জাতিক পত্রিকায় বাংলাদেশের স্বীকৃতিঃ

আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের বরাত দিয়ে মিশিগান থেকে প্রকাশিত “The Herald-Press” পত্রিকার ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় বাংলাদেশকে দেয়া ভারতের স্বীকৃতি ও এর প্রেক্ষিতে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন হবার কথা।

“India recognized the Bangla Desh rebels as the legal government of East Pakistan today and claimed victory in a major tank battle on the border with West Pakistan. 

Pakistan broke diplomatic relations with India in retaliation although these had been maintained through their two previous wars in 1948 and 1965.”

০৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রদান করা ভারতের স্বীকৃতির বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে প্রকাশিত “Santa Cruz Sentinel” পত্রিকার ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় “India recognizes Bangla Desh” নামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। এই প্রবন্ধে সংক্ষেপে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও উপমহাদেশীয় রাজনীতির ক্রমইতিহাস বর্ণনা করা হয়।

০৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রদান করা ভারতের স্বীকৃতির বিষয়ে পেনসিলভানিয়া স্টেট থেকে প্রকাশিত “The Philadelphia Inquirer” পত্রিকার ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় বলা হয়েছেঃ

India Recognizes Bangla Desh 

NEW DELHI (AP)

India formally recognized the government of Bangla Desh today as the government of East Pakistan. 

Prime Minister Indira Gandhi told cheering members of Parliament that the government had decided to recognize the Bangali rebels, who won a national majority in Pakistan-wide elections a year ago, “after careful consideration.”

০৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রদান করা ভুটানের স্বীকৃতির বিষয়ে মিসৌরি স্টেট থেকে প্রকাশিত “The Springfield News-Leader” পত্রিকার ০৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় আন্তজার্তিক সংবাদ সংস্থা “এসোসিয়েট প্রেসের’ বরাতে বলা হয়েছেঃ

“Bhutan Recognizes. Bangla Desh Republic

NEW DELHI (AP)

The Himalayan mountain kingdom of Bhutan became the second nation to recognize the People’s Republic of Bangla Desh, the name given to East Pakistan by the rebels. 

Bhutan’s action was announced Tuesday in New Delhi by a spokesman for the Indian government, which is responsible under a treaty for advising Bhutan on its foreign affairs. Prime Minister Indira Gandhi announced India’s recognition of Bangla Desh on Monday.”

০৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশকে প্রদান করা ভুটানের স্বীকৃতির বিষয়ে এসোসিয়েট প্রেসের একই প্রেসরিলিজ কানেক্টিকাট স্টেট থেকে প্রকাশিত “Hartford Courant”, ইলিনয় স্টেট থেকে প্রকাশিত “Chicago Tribune”, কেনটাকি স্টেট থেকে প্রকাশিত “The Courier-Journal”, অরিগন থেকে প্রকাশিত “Statesman Journal” পত্রিকার ০৮ ডিসেম্বর, ১৯৭১ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই সব প্রেস রিলিজে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে – ভুটান দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের দলিলে ভারতের স্বীকৃতিঃ

বাংলাদেশ প্রথম সরকার থেকে প্রকাশিত সরকারি নিউজ বুলেটিন ‘বাংলাদেশ/Bangladesh’-এর ডিসেম্বর ১০, ১৯৭১ সংখ্যায় স্পষ্ট ভাষায় লেখা হয়েছে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে ভারত ও ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১-এ দ্বিতীয় স্বীকৃতি দিয়েছে ভুটান।

বুলেটিনে বলা হয়েছেঃ

“The People’s Republic of Bangladesh was accorded de jure recognition by India on December 6. India’s formal recognition came after the Bengali Mukti Bahini had liberated most of the territory of Bangladesh from the West Pakistani occupation forces. Bhutan, another close neighbor, accorded formal diplomatic recognition to Bangladesh on December 7.”

বাংলাদেশ প্রথম সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ডিসেম্বর ০৮, ১৯৭১-এ আনুষ্ঠানিক ভাষণে স্পষ্ট করে বলেছেন, বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে ভারত প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এরপরে ভুটান দ্বিতীয় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

তাজউদ্দীন আহমদের এই ভাষণের সংকলন মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রকাশিত আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল পত্রিকা “জয় বাংলা”-তে ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্রকাশিত হয়। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছেঃ

“ভারতের পরে ভুটান স্বীকৃতি দিয়েছে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে। এর জন্য আমরা ভুটানের রাজা ও জনসাধারণের নিকট কৃতজ্ঞ।”

রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ভারত ও ভুটানের স্বীকৃতি প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলোতে যে খবর প্রকাশিত হয়েছিল, তা থেকে এটি স্পষ্ট যে – ভারত প্রথম দেশ হিসেবে ০৬ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয় এবং দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ০৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে ভুটান বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। – এই বিষয়ে দ্বিমত হবার কোন সুযোগ নেই।

ভারত নাকি ভুটান, কে বাংলাদেশকে রাষ্ট্র হিসেবে প্রথমে স্বীকৃতি দিয়েছে তা নিয়ে অনুসন্ধান করার উদ্দেশ্য – ইতিহাসের সঠিক তথ্য তুলে আনা – যেন বর্তমানের প্রেক্ষিতে ঐতিহাসিক তথ্যকে বদলে দেয়া না হয়। ইতিহাস অনুসন্ধানের উদ্দেশ্য জ্ঞানের চর্চা করা – ঐতিহাসিক সত্যকে স্বীকার ও ধারণ করা, ইতিহাসের পাঠ থেকে শিক্ষা নেয়া; এর উদ্দেশ্য কখনই কাউকে ছোট জ্ঞান করা নয়।  ভারত ও ভুটান উভয় রাষ্ট্রই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য বন্ধু। মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ও ভুটানের প্রদত্ত স্বীকৃতি বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও এর জনগণের জন্য সে সময় ছিল একটি বড় আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অর্জন। বর্তমানে প্যালেস্টাইন, কসোভো, তাইওয়ান, পশ্চিম সাহারা, আবখাজিয়া, দক্ষিন ওশেটিয়া, নর্দান সাইপ্রাস, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া, আর্টসাখ এই রাষ্ট্রগুলোর দিকে দেখলে বুঝতে পারা যায় একটি রাষ্ট্রের আন্তজার্তিক স্বীকৃতি কতটা জরুরি।

এভিডেন্সিয়াল কনটেন্ট কৃতজ্ঞতাঃ মুক্তিযুদ্ধ ই-আর্কাইভ, সিবিজিআর, জন্মযুদ্ধ।

বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেয় ভারত

লেখকঃ সাব্বির হোসাইন

১/১৫/২০২১, কানেক্টিকাট

মন্তব্যসমূহ
বই পড়তে 'মুক্তিযুদ্ধ ই-লাইব্রেরি' এ্যাপটি ব্যবহার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button