বিপ্লবী বাংলাদেশ
সংকলন ও সম্পাদনা সত্যজিৎ রায় মজুমদার
২০২২
মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের ক্ষেত্রে সহগ হিসেবে যতগুলো উপাদান ক্রিয়াশীল ছিল, এর মধ্যে অন্যতম ছিল ৭১ সালের গণমাধ্যম, বিশেষত সংবাদপত্র। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এসেও এই গণমাধ্যমের তথ্য ও চিত্রের ওপর নির্ভর করতে হয় অধিকাংশ ক্ষেত্রে।
মুক্তিযুদ্ধকালে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদে প্রায় একশটি পত্রিকা এ সময়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল। এগুলির মধ্যে ৬৪টি পত্রিকার পরিচয় উদ্ধার করেছেন গবেষকগণ। নূরুল আলম ফরিদ সম্পাদিত ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’-ও এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি পত্রিকা। ’৭১ সালে ৯নং সেক্টরের মুক্তিযুদ্ধে এই পত্রিকার প্রকাশ ছিল ঘটনাবহুল এবং এর প্রভাবও ছিল ব্যাপক। মাত্র ১৯টি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল পত্রিকাটির। পরবর্তীকালে এটি দেশ স্বাধীনের পর নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হয়ে আসছে, বর্তমানে দৈনিক পত্রিকা আকারে প্রকাশ পেয়ে থাকে।
অথচ একাত্তরে প্রকাশিত বিপ্লবী বাংলাদেশ নিয়ে কোনো গবেষণা হয়নি। বিপ্লবী বাংলাদেশ যুদ্ধক্ষেত্রে গোলা-বারুদের চেয়ে বেশি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। এই পত্রিকা সাধারণ মানুষের শক্তি জুগিয়ে শত্রুর মনোবল ভেঙে দিতে সাহায্য করেছে। ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’-এ প্রকাশিত ছবি এবং সংবাদ মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা সংগ্রহ করে নিজের দেশে প্রচার করেছে, যার ফলে দেশ এবং বিশ্ববাসীকে যুদ্ধের খবরাখবর জানাতে অসামান্য অবদান রেখেছে পত্রিকাটি।
একাত্তরে প্রকাশিত ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ’-এর অবদান ও প্রকাশিত তথ্যগুলোকে আঞ্চলিক ইতিহাসের উপাদান হিসেবে সমাজে অত্যন্ত জরুরি। বৃহত্তর পাঠক এবং গবেষক সমাজের অগোচরে থাকা এই দলিল উন্মুক্ত হওয়ার জরুরিতা থেকেই সম্প্রতি পত্রিকাটি গ্রন্থরূপ পেয়েছে। একাত্তরের বাস্তবতার প্রামাণ্যকরণে এর গুরুত্ব অপরিসীম এবং মুক্তিযুদ্ধের জাতীয় ইতিহাসের মূল্যবান উপাদান হিসেবে এটি সংরক্ষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ের তরুণ প্রজন্ম এই উপাদান থেকেই সৃষ্টি করবে বস্তুনিষ্ঠ, সমৃদ্ধ ও পূর্ণাঙ্গ এক জাতীয় ইতিহাস।